নমস্কার, সনাতন ধর্মের জয়। sanatan sikkha তে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকের এই ব্লগে আমি বলবো যে কারা কারা krishna ভক্ত হতে পারে বা যারা কৃষ্ণ ভক্ত হয় না, এমন কি করলে তারা কৃষ্ণ ভক্ত হতে পারবে। শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত তো সবাই হতে পারে না। কুটি তে গুটি। মানে এক কোটি লোকের মধ্যে একজন krishna ভক্ত হয়। অনেক কর্মফল ও ভাগ্যেরও ব্যাপার থাকে। শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত হতে কি কি দরকার সব কিছুই আলোচনা করবো। কিন্তু তার আগে আমাদের জানতে হবে যে শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত কত প্রকার ও কি কি ? তাহলে চলুন শুরু করি...
শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত কারা ? |
শ্রী Krishna ভক্ত কত প্রকার ?
শ্রী Krishna ভক্ত / আর্ত ভক্ত :
এই মায়াময় সংসারে আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিনই আমাদের কিছু না কিছু অসুবিধা থাকবে। এই সংসারে মানুষের জীবনে সবসময়েই কিছু না কিছু চিন্তা বা দুশ্চিন্তা, আশংখ্যা, কষ্ট, দুঃখ, ভয়, রাগ, স্বপ্ন, ইচ্ছা বা অনিচ্ছা থাকেই। বলতে পারেন ভগবান shree krishna আমাদেরকে সংসারের এই মায়া দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। মায়াময় সংসারে থেকে এই মায়া কাটিয়ে উঠতে পারলেই এগুলো আর কিছুই থাকবে না। যারা বিপদে পড়ে, অথবা বিপদ কাটানোর জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে ডাকেন তারা হলো আর্ত ভক্ত। যেমন মহাভারতের দ্রৌপদী।
শ্রী Krishna ভক্ত / অর্থাতি ভক্ত :
জড় জগতের মানুষেরা কিছু না কিছু আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। তারা সবসময়েই তাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবে। কেউ আর চরিত্র নিয়ে ভাবে না। একটি উত্তম চরিত্র কিভাবে নির্মিত হবে এই নিয়ে লোকে কমই ভাবে। মানুষ তাদের আশা পূরণের জন্য কত কিছুই না করে। কিন্তু একটি কথা আছে দেওয়ার হলে আমাদের প্রভু krishna ই দিবেন। যতটুকু দেওয়ার ততটুকুই দিবেন। আর যারা যারা নিবেন সেটা তাদের কর্মফল অনুযায়ী তারা নিতে পারবেন। কর্মফল ছাড়া কেউ কিচ্ছু নিতে পারবেন না। তাই আমি বলি সব কিছু আশা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নকে ত্যাগ করে শুধুমাত্র ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে ডাকেন। তিনিই আপনাকে সঠিক পথ দেখাবেন আর সব কিছুই দিবেন। যারা কোনো আশা বা কোনো ইচ্ছা পূরণ করার জন্য ভগবানকে ডাকেন বা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন তাদের অর্থাতি ভক্ত বলা হয়। যেমন মহাভারতের অম্বা।
শ্রী Krishna ভক্ত / জিজ্ঞাসু ভক্ত :
জ্ঞান থেকে ভক্তির উদয় হয় আর ভক্তি থেকে প্রেমের। এমন অনেক ভক্ত আছেন যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে চিনতে চান বা জানতে চান। একটি কথা বলতে হয়, ভগবান বলতে একজনই আছেন আর তিনি হলেন shree krishna আর কিন্তু বাকি সবাই দেবতা। ভগবানকে চিনতে বা জানতে আত্মজ্ঞানের দরকার হয়। আর আত্মজ্ঞান পেতে হলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে ভালোবাসতে হবে। তাকে প্রেম করতে হবে। যে সমস্ত ভক্তরা জ্ঞানের দ্বারা ভগবানকে চিনতে চান বা জানতে চান সেই সমস্ত ভক্তদের জিজ্ঞাসু ভক্ত বলা হয়ে থাকে। যেমন মহাভারতের অর্জুন ছিলেন জিজ্ঞাসু ভক্ত।
শ্রী Krishna ভক্ত / জ্ঞানী ভক্ত :
যেই সমস্ত ভক্তরা বুঝে গেছেন এই সংসারে krishna ছাড়া আর কিচ্ছু নেই, তার ইশারা ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না, তাদের কাছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সব কিছু। যা কিছু হবার তার ইশারাতেই হবে, আর যেটা করার তিনিই করবেন। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া তারা কিছু ভাবে না। এই সমস্ত ভক্তরাই হলো জ্ঞানী ভক্ত। মানে যে সমস্ত ভক্তরা কোনোরকম কিছু আশা, আকাঙ্ক্ষা না রেখে ভগবানকে ডাকেন আর ভগবানের ভজনা করেন তারাই হলো জ্ঞানী ভক্ত। এইরকম একজন ভক্ত হলো ভক্ত প্রল্লাদ। krishna ভক্ত হওয়া কিন্তু এতো সহজ নয় ভক্ত হতে হলে ভগবানের প্রতি সম্পূর্ন সমর্পিত হতে হবে। মানে নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, আশা, স্বপ্ন, মন, সিদ্ধান্ত, চাওয়া পাওয়া, এমন কি নিজে নিজেকেও ভগবানের উপরে ছেড়ে দিতে হবে। তাই তো বলা হয়ে থাকে,
"যে করে আমার আশ।
তাকে করি আমি সর্বনাশ।।
তবুও যদি না ছাড়ে আমার পাস।
তাহলে আমি হয় তার দাসের দাস"।।
কালিয়া নাগ দমনের কাহিনী পড়ুন।
কারা শ্রী Krishna ভক্ত হয়ে থাকে ?
পাপী লোক কোনোদিনই কৃষ্ণ ভক্ত হতে চায় না। যেই সকল মানুষদের ভেতরটা পাপে ভোরে গেছে, যারা পাপ কাজ করে জীবন যাপন করে। তারা কোনোদিনও কৃষ্ণ ভক্ত হতে পারে না। তারা শুধু অহংকার আর অধর্মই করে। কিন্তু প্রান গোবিন্দ আমার, এই দুটোই তো পছন্দ করেন না। তাই তো তিনি সবার আগে লোকের অহংকার চু্র্ন করেন। krishna ভক্ত হলে হলে দেহ ও মন শুদ্ধ হতে হবে। ভগবান গীতায় তো বলেই রেখেছেন যারা পাপকে সম্পূর্নভাবে দূর করতে পেরেছেন এবং এই মায়াময় সংসারের মায়া ও মোহকে ত্যাগ করতে পেরেছেন সেই পুণ্যবান ব্যাক্তিই একমাত্র নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ভজনা করে।
এর পিছনে আবার একটি কথা আছে। krishna ভক্ত হওয়া এতো সহজ নয়। যারা অনেক অনেক জন্মের পুণ্য অর্জন করেছেন তাদের হৃদয়েই শুধু কৃষ্ণ ভক্তির কলি জন্ম হয়ে থাকে। তাই যদি কোথাও দেখা যায় যে, কেও ভগবানের ভক্ত হয়নি অথবা যদি দেখেন কেও পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণুর নিন্দা চর্চা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে তাদের এখনো শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত হওয়ার সময় হয়নি। তারা এখনো পরমেশ্বর ভগবানের ভক্ত হওয়ার যোগ্যতা লাভ করেনি। এইজন্য আমাদের সকলের তাদের হয়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করা উচিত যে, তিনি যেন তাদেরকে কৃপা করেন। ।। জয় শ্রীকৃষ্ণ।।
শ্রী Krishna সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন :
ভক্তদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে যেগুলো তারা জানতে চায়। তাই আমি প্রধান প্রধান কয়েকটি প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দিতে চাই। শুধুমাত্র ভক্তদের কথা চিন্তা করে তাদের জন্যে কয়েকটি প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি...
শ্রী Krishna ভক্তদের এতো দুঃখ কষ্ট দেয় কেনো ?
ভগবান শ্রী কৃষ্ণের লীলা অপরিসীম। তার লীলা দেবতারাও সহজে বুজতে পারে না। আর আমরা সাধারন মানুষ কি বুজবো। তিনি প্রতি মুহূর্তে ভক্তদের পরীক্ষা করেন তাদের ভক্তি আর ভালোবাসাকে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের দুঃখ কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা করে নেন যে, ঐ সময়ে ভক্তরা ভগবানের প্রতি কিরকম আচরন করে। হাজার দুঃখ, কষ্ট আর ত্যাগের পর তাদের ভক্তি ও প্রেম পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের প্রতি যদি একই থাকে তাহলে ভগবান তাদেরকে কৃপা করেন।
শ্রী Krishna naam নাম জপ করলে কি হয় ?
শ্রী Krishna নাম কিন্তু কোনো সাধারন নাম নয়। এটা কোনো সাধারন মন্ত্রও নয়। এটা হলো কৃষ্ণ প্রাপ্তির এক মহামন্ত্র। এই শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীকৃষ্ণ নিজেই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অবতারে জন্ম নিয়ে প্রচার করেছেন জীবের কল্যানের জন্য। সুতরাং কৃষ্ণ নাম জপ করা ছাড়া জীবের কোনো গতি নেই। কারন নাম থেকে হৃদয়ে ভাবের উৎপন্ন হবে, আর ভাবের থেকে ভক্তির, আর হৃদয়ে ভক্তির উদয় হলে তা থেকে আবার প্রেমের সৃষ্টি হবে। আর এই প্রেম নিয়েই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ধরতে হবে। কথাই আছে "বিনা প্রেম সে নেহি মিলেগা নন্দলালা"। নান্দলালা হলো শ্রীকৃষ্ণ। তাই তাকে ধরতে হলে তাকে প্রেম করতে হবে।
শ্রী Krishna ভক্তরা কি গরিব হয় ?
শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত কোনোদিনও গরিব হতে পারে না। বরং তারাই প্রকৃতপক্ষে ধনী। একজন মুচিও কিন্তু krishna ভক্ত হতে পারে। " মুচিরাও শোচি যদি তারা কৃষ্ণ ভক্ত হয়"। হতে পারে এই জড়োজগতে, মায়াময় সংসারে কৃষ্ণ ভক্তরা গরিব। তাদের কাছে ধন-সাম্পত্তি নাও থাকতে পারে। এমনও হতে পারে যে তাদের থাকার ঘর নেই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারাই ধনী। কারন শ্রীকৃষ্ণ ভক্ত হতে যেই ধন-সাম্পত্তি লাগে তা তাদের কাছে পরিপূর্ণ থাকে। যেটা এই জড়োজগতের ধন-সাম্পত্তি থেকে অনেক অনেক বেশি দামি। আর সেই ধন-সাম্পত্তি হলো ভগবানের প্রতি ভক্তি, জ্ঞান, প্রেম, এবং তার প্রতিটি বাক্য পালন করার মতো শক্তি।
ধন্যবাদ।।