নমস্কার সনাতন ধর্মের জয়। sanatan sikkha র আরো একটি নতুন ধর্ম কথায় আপনাদের স্বাগত জানাই। আজকে এই পোস্টে আমি খুবই একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আর সেই আলোচনাটি হলো Tulsi Mala Benefits নিয়ে। কেন তুলসী মালা গলায় ধারন করা উচিত ? এই বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করবো। কিন্তু তার আগে তুলসী মহারানির কয়েকটি কথা জেনে রাখা দরকার। চলুন তাহলে শুরু করি।
সনাতন ধর্ম অনুযায়ী দেবী তুলসী হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের খুবই প্রিয়। দেবী তুলসী হলেন কৃষ্ণ প্রেয়সী। জেনে রাখুন, দেবী তুলসীর দর্শন মাত্রই পূর্ণ লাভ হয়। আর যদি কেও দেবী তুলসীকে স্পর্শ করে তবে তার পাপক্ষয় হয়। (Tulsi) তুলসী দেবীকে স্মরণ করলে সর্বতীর্থের ফল লাভ হয়। আবার তুলসীর সেবনে প্রভুর চরণ লাভ হয়।
Tulsi Mala Benefits |
Tulsi Plant // তুলসী মহারানির পরিচয় :
দেবী তুলসী পূর্বজন্মে শ্রীকৃষ্ণের এক গোপী ছিলেন। তিনি রাধা কৃষ্ণের সাথে গোলোকে থাকতেন। তার নাম ছিল দেবী বৃন্দা। তখন তার একটাই ইচ্ছা ছিল, শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া। গোলোকে রাধা কৃষ্ণকে একসাথে দেখে দেবী বৃন্দা মনে মনে খুব দুঃখ পেতেন। আর তার খুব খারাপও লাগতো। কিন্তু (Radha krishna) রাধা কৃষ্ণ যে একই এটা তিনি তখনও বুজতে পারেননি। তাই তিনি দেবী রাধাকে হিংসা করতে লাগলেন। একদিন দেবী বৃন্দার মনে শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়ার ইচ্ছা প্রবল আকার ধারন করে এবং তিনি শ্রীকৃষ্ণকে বিবাহ করতে চান। উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ দেবী বৃন্দাকে বলেন তিনি তার এই ইচ্ছা এই জন্মে নয়, পরের জন্মে অবশ্যই পূরণ করবেন।পরের জন্মে দেবী বৃন্দা মাতা মাধবীর গর্ভে জন্মগ্রহন করেন এবং তার নাম হয় (Tulsi) তুলসী। আবার অন্যদিকে প্রভু শ্রীকৃষ্ণেরই আরেকজন ভক্ত শ্রীদাম অসুর হয়ে জন্ম নেন এবং তার নাম হয় শঙ্খচুর।
Tulsi Vivah // দেবী তুলসীর বিবাহ :
অবশেষে দেবী তুলসী ও অসুর শঙ্খচুরের বিবাহ হয়। দেবী তুলসীর প্রেম অসুর শঙ্খচুরের জন্য এতটাই পবিত্র ছিল যে তার প্রেম থেকে শঙ্খচুরের শক্তি দিন দিন বাড়তে থাকে। আবার দানব শঙ্খচুরের বর ছিল, তার স্ত্রীর মানে দেবী তুলসীর সতিত্ত্ব নষ্ট হলে দানব শঙ্খচুরের মৃত্যু হবে। কিন্তু (Tulsi devi) দেবী তুলসী তো আর জানতেন না যে তার স্বামী একজন অসুর, এবং সে এই বিশ্ব ব্রম্যান্ডকে ধ্বংস করতে চলেছেন। তাই দেবী তুলসীর প্রেম ও ভালোবাসা পেয়ে দানব শঙ্খচুরের শক্তি বাড়তে থাকে এবং তার সাথে সাথে অহংকারও বাড়তে থাকে।অসুর শঙ্খচুর সমস্ত সংসার ধ্বংস করার চেষ্টা করায় দেবতারা সবাই মহাদেবের কাছে যান সাহায্যের জন্য। সমস্ত সংসারকে রক্ষা করার জন্য মহাদেব শঙ্খচুরের সাথে যুদ্ধ শুরু করে। ঠিক সেই সময়ে ভগবান (Sri krishna) শ্রীকৃষ্ণ অসুর শঙ্খচুরের রূপ ধারন করে, দেবী তুলসীর সতিত্ব নষ্ট করে। যার ফলে মহাদেবের ত্রিশূল দ্বারা অসুর শঙ্খচুরের মৃত্যু হয়।
শঙ্খচুরের মৃত্যু সংবাদ এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ছলনার কথা জানতে পেরে (Tulsi devi) তুলসী দেবী শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দেন যে শ্রীকৃষ্ণ চিরদিনের জন্য পাথর হয়ে যাবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তুলসী দেবীর অভিশাপ স্বীকার করেন এবং তিনি পাথর হয়ে যান। কিন্তু তখন তো দেবী তুলসী সত্যটা জানতেন না। দেবী তুলসী শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপ দেওয়ায় শ্রীরাধা খুবই দুঃখ পান এবং তিনি তুলসী দেবীকে সত্যটা জানাতে চান। কিন্তু প্রভু শ্রীকৃষ্ণ বারন করাতে (Sriradha) শ্রীরাধা দেবী তুলসীকে সত্যি কথাটা বলতে পারেন না।
এদিকে আবার সত্যটা জানতে দেবী তুলসীর খুব ইচ্ছে হয় এবং তিনি এইজন্যে মহাদেবের কঠোর তপস্যা শুরু করেন। মহাদেব (Tulsi) তুলসী দেবীর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে দেখা দেন। তারপর সত্যিটা জানতে পেরে মনে মনে দুঃখিত হন আর প্রায়শ্চিত্ত করতে চান। প্রায়শ্চিত্ত করতে চাওয়ায় তিনি শ্রীকৃষ্ণকে দেওয়া অভিশাপ ফিরিয়ে নিতে চান। কিন্তু অভিশাপ ফিরিয়ে নিতে চাইলে তো ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তারজন্যে তুলসী দেবীকে সেই শ্রাপিত পাষান শ্রীকৃষ্ণকে বিবাহ করতে হবে। আবার দেবী তুলসী মানবী রূপ থেকে বৃক্ষ রূপ নিলে তবেই শ্রীকৃষ্ণ তুলসী দেবীকে বিবাহ করবেন। এতে তুলসী দেবী রাজি হন এবং দেবী তুলসী আর শ্রীকৃষ্ণের বিবাহ হয়। এবং তারপর থেকে শ্রীকৃষ্ণ পাষানরূপ হয়ে সবসময় তুলসীযুক্ত হয়ে থাকেন। এইভাবে দেবী তুলসীর পূর্বজন্মের ইচ্ছা পূরণ হয় এবং শ্রীকৃষ্ণও তুলসী দেবীর অভিশাপ থেকে মুক্ত হন।
Tulsi Maharani // তুলসী মহারানির মাহাত্ম :
তুলসী মহারানীর মাহাত্মর কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার মাহাত্ম বিশাল। (Tulsi devi) তুলসী দেবী হলেন মানবজাতির জন্য পুন্যময় ও কল্যানময়। মাতা লক্ষীর মতো দেবী তুলসীও শ্রীহরি বিষ্ণুর খুবই প্রিয়। পার্থক্য শুধু এটাই যে, মাতা লক্ষী থাকেন শ্রীহরি বিষ্ণুর গৃহে আর দেবী তুলসী থাকেন শ্রীহরি বিষ্ণুর গৃহাঙ্গনে। তাহলে আপনারা তো জানলেন যে তুলসী পত্র কতটা পবিত্র। আর যদি তাকে যদি গলায় ধারন করা যায় তাহলে কতটা পুণ্যি হতে পারে এটা আপনারা কল্পনা করতেই পারেন। (Tulsi mala benefits) তুলসী মালার উপকার প্রচুর। (Tulsi mala) তুলসী মালা কণ্ঠে ধারন করার মানেই হলো তুলসীকে কণ্ঠে ধারন করা। চলুন তাহলে তুলসী মহারানির মাহাত্ম্যের কিছু কথা জেনে নেই।তুলসী পত্র মানবজাতির জীবনকালের জন্যে ঔষধ এবং মৃত্যুকালে তুলসী পত্র ছাড়া তার উদ্ধার হয় না।
শ্রীহরি বিষ্ণুকে একটি মাত্র তুলসী পত্র দান করলে যে পুণ্যি লাভ হয়, তাকে হাজার হাজার কলসি অমৃত দান করলেও সেই পুণ্যি লাভ করা যায় না।
তুলসী পত্র ছাড়া শ্রীহরি বিষ্ণু কোনো ভোগবস্তুই গ্রহণ করেন না।
যদি কোনো ব্যাক্তি প্রতিদিন তুলসী দর্শন, তুলসী তলায় জল দান, তুলসী প্রনাম, তুলসী মন্দির প্রদক্ষিন, তুলসীকে স্মরণ এবং তুলসী পত্র সেবন করেন তাহলে সেই ব্যাক্তির শ্রীহরি বিষ্ণুর চরণ লাভ হয় এবং বৃন্দাবনে তার বাস হয়।
তুলসী নাম এতটাই শুদ্ধ, এতটাই পবিত্র যে, তার নাম নেওয়া মাত্রই মনে শান্তি চলে আসে।
Tulsi mala // তুলসী মালা কারা পড়তে পারবেন ?
তুলসী মালা এতটাই পবিত্র যে, যে কোনো ব্যাক্তি তুলসী মালাকে তার কণ্ঠে ধারন করতে পারবে। এতে লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না। নিচে আলোচনা করা (Tulsi mala benefits) তুলসী মালা কণ্ঠে ধারন করার উপকারিতার ব্যাপারে জানলে বুজতে পারবেন।
যখন কোনো গুরুজন বা কোনো সাধু ব্যাক্তি তুলসী মালা গলায় ধারন করতে বলেন তখন অনেকে টিটকারি করে। বলে এখনো আমাদের সময় হয় নি। বৃদ্ধ হলে পড়বো। কিন্তু তুলসী মালা পড়ার তো কোনো বয়স হয় না। (Tulsi mala) তুলসী মালা যে কোনো সময় পড়া যায়। কিন্তু আবার একটি কথা আছে যে, যারা প্রকৃত কৃষ্ণভক্ত একমাত্র তাদের কণ্ঠেই তুলসী মালা শোভা দেয়।
আমরা যে গলায় সোনার, রুপার বা অন্য কোনো ধাতুর মালা পড়ি তা শুধু এই জগতে আকর্ষনীয় করে তুলবে। কিন্তু তুলসী মালা এমন একটা অলংকার যেটা ধারন করলে ইহকাল এবং পরকাল দুই কালেই আপনাকে আকর্ষনীয় করবে এবং সুন্দর রূপ দান করবে।
কারা প্রকৃত কৃষ্ণভক্ত হয় ? (পড়ুন)
কালিয়া নাগ দমন কিভাবে হয়েছিল ? (পড়ুন)
Tulsi Mala Benefits // তুলসী মালা পড়ার উপকারিতা :
যিনি তুলসীকাষ্ঠ নির্মিত মালা শ্রীহরি বিষ্ণুকে নিবেদন করে ভক্তি সহকারে নিজের কণ্ঠে ধারন করবেন অবশ্যই তার অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হবে।সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো যে, কোনো মেয়ে যদি তুলসী মালা পড়া অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হেটে যায় তাহলে সে কোনোদিনও ইভটিজারদের শিকার হন না। বিশ্বাস না হলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
(Tulsi mala) পড়া ব্যাক্তিকে যমরাজাও স্পর্শ করতে পারে না। দূর থেকে দেখে প্রণাম করে চলে যায়। কারন সে কৃষ্ণভক্ত। তার নাম ভগবানের খাতায় লেখা হয়ে গেছে। তাহলে বুজতেই পারলেন, তুলসী মালা পড়লে যমরাজাও কিছু করতে পারবে না।
তুলসী মালা গলায় থাকা অবস্থায় যদি কোনো ব্যাক্তির মৃত্যু হয় তাহলে তাকে নরকগামী হতে হয় না। এমনকি সে যদি ভক্ত নাও হয়ে থাকে তবুও তাকে নরকগামী হতে হয় না।
যারা তুলসী মালা কণ্ঠে ধারন করে আছেন, তাদের কোনোদিনও বজ্রপাতের মাধ্যমে মৃত্যু হয় না।
আমরা সবাই দেখি যে সাপুড়িয়াদের হাতে একটি করে লাঠি থাকে। সেই লাঠির মাথায় কিন্তু তুলসী লাগানো থাকে। যার কারনে সাপেরা কিন্তু মাথা তুলে তাকাতে পারে না। ঠিক সেইরকমই গলায় যদি তুলসী মালা পড়া থাকে তাহলে কোনোদিনও সাপেরা কাটে না বা ছোবল দেয় না।
আমরা অনেকে দিনে বা রাতে ঘুমানোর পর বাজে স্বপ্ন বা ভয়ের স্বপ্ন দেখে থাকি। তারপর ভয়ে তাদের হাত পা কাঁপতে থাকে। যার কারনে শরীরে বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তুলসী মালা গলায় পড়া থাকলে এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আবার অনেকে তুলসী মালা ধারন করার পরে মায়াতে পড়ে প্রভু শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে যায়। যদি এমনটা হয় তাহলে ভগবান তাকে ফেলে দেয় না। বরং তার সৎগতি করে এবং তাকে পুনরায় ভক্ত ঘরে জন্মগ্রহন করায়। যাতে তার উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা আরো বেশী হয়।
যারা (Tulsi mala) তুলসী মালা ধারন করেছেন তারা তুলসী মহারানির কৃপায় আস্তে আস্তে মিথ্যা কথা বলা কমিয়ে দেয়। এবং এককালে তারা মিথ্যা কথা বলে না। আর শাস্ত্রে তো লেখাই আছে যে, মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ।
শেষ বিদায়ে একটি কথা বলতে চাই, মৃত্যুর পর চোখে তুলসী পাতা দিয়ে লাভ নেই। তখন তুলসী পাতা দিয়ে কি লাভ ? তখন তো দেহ থেকে প্রান গোবিন্দো চলেই গেছেন। দেহে প্রান গোবিন্দো থাকে তুলসী মালা গলায় দিলেন না, সুতরাং মৃত্যুর পরে তুলসী পাতা দিয়ে কোনো লাভ হয় না। ওটা দেওয়া হয় শুধুমাত্র নিয়ম পালনের জন্যে। তাহলে আসুন আমরা সবাই মিলে শ্রীকৃষ্ণের মহামন্ত্র নাম জপ করে দেবী তুলসীকে কণ্ঠে ধারন করি।
Conclusion // উপসংহার:
এতক্ষন আপনারা (Tulsi mala benefits) তুলসী মালা কণ্ঠে ধারন করার উপকারিতার ব্যাপারে পড়লেন। কেমন লাগলো আমার লেখা এই পোস্টটি ? কমেন্ট করে জানাবেন। আর হ্যা দেবী তুলসীর কৃপা পেতে এবং সবাইকে তার কৃপা পাওয়াতে পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করবেন। পোস্টটির মধ্যে কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে sanatan sikkha কোনোরকমভাবে দায়বদ্ধ হবে না।(Tulsi mala) তুলসী মালা নিয়ে কিছু প্রশ্ন:
এই পোস্টে আমি তুলসী মালা নিয়ে সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। যেটা সাধারনত প্রায় সবার মনেই থাকে(Tulsi mala) তুলসী মালা করা পড়তে পারবেন ?
তুলসী মালা সবাই পড়তে পারেন। সে যদি মহাপাপি হয় বা অত্যাচারী হয়, সবাই গলায় তুলসী মালা পড়তে পারবেন। তুলসী রানীর কৃপায় সবারই সৎগতি হবে।(Tulsi mala) তুলসী মালা কখন পড়া যাবে ?
হরিভজন করার কোনো সময় বা বয়স হয় বা। যে কোনো সময়েই হরিভজন করা যায়। ঠিক তেমনই কণ্ঠে তুলসী মালা ধারন করার কোনো সময় বা বয়স হয় না। যে কোনো সময়েই তা ধারন করা যায়। তাই তুলসী মহারানীর কৃপা পেতে আজই তুলসী মালা ধারন করুন।জয় তুলসী মহারানী কি !! জয় !!
Valo hoyeche
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন