নমস্কার, সনাতন ধর্মের জয়। Sanatan Sikkha তে আপনাদের স্বাগত। আমি জানি, আপনারা অনেকেই জানতে চান Radha Krishna কি একজন না দুজন আবার Radha র নাম Krishna নামের আগে নেওয়া হয় কেন ? আর তাই আমি আজকের পোস্টে এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করতে চলেছি। এর সাথে আরো অনেক কিছু আলোচনা করা হবে। যারা জানতে ইচ্ছুক তারা অবশ্যই এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আশা করি আপনারা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আমরা কিন্তু রাধা কৃষ্ণ, রাধা মাধব, লক্ষী নারায়ন বলে থাকি। কেও কিন্তু কৃষ্ণ রাধা বা নারায়ন লক্ষী বলি না। তাহলে চলুন আসল কারনটি জেনে নেই...
Radha Krishna |
Radha Krishna এর জন্ম:
শ্রীকৃষ্ণ, কংস নামক এক অসুর রাজাকে সংহার করার জন্যে এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করেছিলেন। তিনি আরো অনেক অসুরকে সংহার করেছিলেন। যেমন তিনি পুতুনা রাক্ষসীকে বধ করেছিলেন, কালিয়া নাগ দমন করেছিলেন, দন্তবক্রশুরকে বধ করেছিলেন, শিশুপালকে মুক্ত করেছিলেন, এইরকম আরো অনেক অসুরকে সংহার করেছিলেন। তার সাথে তিনি রাধারানির সাথে অনেক লীলা করেছিলেন। জীব শিক্ষা ও তাদের তাদের মুক্তির পথ দেখিয়ে ছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মের ১৫ দিন পরে শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে বরসানাতে দেবী রাধার আবির্ভাব হয়। তিনি হাজার পাঁপড়ি বিশিষ্ট সোনার পদ্মে আবির্ভূত হয়েছিল। তার মাতা কীর্তিদা ও পিতা বৃষভানুর কোনো সন্তান ছিল না। তারা একটি কন্যা সন্তান চেয়েছিলেন। তাই তারা দেবী Radha কে সোনার পদ্মে পেয়ে নিজের মেয়ের মতো লালন পালন করেন।
রাধা যখন আবির্ভুত হয়েছিলেন তখন তার পিতা বৃষভানু স্নান করছিলেন। স্নান করা অবস্থায় তিনি সেই হাজার পাঁপড়ি বিশিষ্ট সোনার পদ্ম দেখতে পান যেখানে দেবী রাধার আবির্ভুত হয়েছিল। বৃষভানু কাছে এসে সেই পদ্মে একটি মেয়েকে দেখতে পান এবং তারা সেই মেয়েটিকে লালন পালান করেন।
গোলোকে থাকাকালীন শ্রীদাম যখন দেবী রাধাকে অভিশাপ করেছিলেন যে তিনি Srikrishna কে ১০০ বৎসর পর্যন্ত্য ভুলে থাকবেন এবং পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করবেন তখন দেবী রাধা শ্রীকৃষ্ণকে বলেছিলেন যে তিনি পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার পর শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কারো মুখ দেখবেন না। তাই তিনি জন্ম নেওয়ার পর তার চোখ খুলেননি। আর এদিকে তার পিতা বৃষভানু ও মাতা কীর্তিদা মনে করেছিলেন যে তার মেয়ে বোধহয় অন্ধ হয়েছেন। যাইহোক বৎসর পরে যখন বৃষভানু তার মেয়ের জন্ম উৎসব পালন করেন তখন সেই উৎসবে তিনি তার মিত্র নন্দ রাজাকে নিমন্ত্রন করেছিলেন। নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্যে নন্দ মহারাজ কৃষ্ণকে নিয়ে বরসানা যান। সেখানে কৃষ্ণ সবার আড়ালে হামাগুড়ি দিয়ে দেবী রাধার কাছে যান। এবং শ্রীকৃষ্ণের স্পর্শে দেবী রাধা, তার প্রভু, জীবন, আত্মা, প্রেমের মধুরময় মুখ দেখার জন্যে প্রথমবার চোখ খুলেন। এইরকম ছিলো Radha Krishna এর লীলা।
এগুলো পড়ুন:
দেবী তুলসী এবং তুলসী মালার মাহাত্ম
দোল পূর্ণিমার ইতিহাস ও তাৎপর্য
Radha Krishna এর প্রেম:
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ খুব ছোটবেলা থেকেই মনে মনে রাধারানির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। তাদের এই প্রেম বৃন্দাবনের ভূমিতে প্রস্ফুটিত হয়। আর বৃন্দাবন ছিল রাধার হৃদয় আর ব্রজের সবচেয়ে আশীর্বাদপূর্ন ভূমি। ওখানে যমুনার তীরে তারা অনেক লীলা করেছিলেন। বৃন্দাবনে রাধা কৃষ্ণ গোপনে দেখা করতেন। যমুনার তীরে কদমতলায় শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজাতেন। যা শুনে দেবী রাধা কৃষ্ণের সাথে দেখা করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে যেতেন।
আমরা যখনি ভগবান Srikrishna এর কথা বলতে চাই বা লিখতে চাই, তার আগেই কিন্তু Radha রানির নাম চলে আসে। তার কারন Radha Krishna এর প্রেম হলো সমস্ত বিশ্বের সবথেকে শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক প্রেম। আর তাছাড়াও তাদের দুজনকে আমরা সবসময় যুগলরূপে দেখি। সেটা কোনো ছবিতেই হোক বা অন্তরমন থেকেই হোক। শ্রীকৃষ্ণের কাছে দুটি জিনিস খুব প্রিয় ছিল। এক হলো তার বাঁশি আরেক হলো রাধা। শ্রীকৃষ্ণ যখনই বাঁশি বাজাতেন তখনই রাধারানি ব্যাকুল হয়ে শ্রীকৃষ্ণের কাছে ছুটে চলে আসতেন। তাইতো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার বাঁশিটিকে সবসময়েই তার কাছে রাখতেন। আবার দেবী রাধার স্মরণে কিন্তু প্রভু শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজাতেন। এইজন্যে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিটিকে রাধা কৃষ্ণের প্রেমের প্রতীক হিসাবে মানা হয়।
ব্রহ্মবৈবর্ত পূরাণ অনুযায়ী Srikrishna নিজেকে আনন্দ প্রদান করার জন্য তার নিজের বাম অংশ থেকে রাধারানীকে সৃষ্টি করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের আদিশক্তি হলেন রাধা। মানে Radha হলেন কৃষ্ণের অন্তরঙ্গা শক্তি। তাদের দুজনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, তারা দুজন একই। শুধুমাত্র লীলারস আস্বাদন করার জন্য তারা দুই দেহ ধারন করেছেন। এবং তার সাথে এক নতুন বৈষ্ণব ধর্ম সৃষ্টি করেছেন। আর এই বৈষ্ণব ধর্মের কেন্দ্রীয়স্বরূপ হলেন দেবী রাধা। কবি জয়দেব তার গীতগোবিন্দ কাব্যে এই বৈষ্ণব ধর্মকে অবলম্বন করেই গোবিন্দেগীতি রচনাটি আবিষ্কার করেছিলেন।
Radha Krishna বিবাহ করেননি কেন ?
রাধা কৃষ্ণকে বিবাহ করতে চাইলে কৃষ্ণ রাধাকে বলেন যে, আমাদের বিবাহ করা সম্ভব নয় কারন বিবাহ করতে দুটি দেহ ও দুটি আত্মার দরকার হয়। আর আমরা দুজনে তো একই এবং আমাদের দেহ দুটি হতে পারে কিন্তু আত্মা আমাদের একটাই। তাই আমরা বিবাহ করতে পারবো না।
আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী দেবী Radha হলেন Srikrishna এর বিধিসম্মত স্ত্রী। বৃন্দাবন থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ভান্ডিরবনে তাদের বিবাহ হয়। যদিও তাদের এই বিবাহাটি গোপনে হয় তবুও এই বিবাহের প্রধান সাক্ষী থাকেন স্বয়ং ব্রহ্মদেব। তিনি নিজে পুরোহিত হয়ে Radha Krishna কে বিবাহ দেন। তাই তাদের এই বিবাহকে ব্রহ্ম বিবাহও বলা হয়ে থাকে।
Conclusion / উপসংহার:
অবশেষে বলা যায়, Radha Krishna এর মধ্যে কোনো পার্থক্য এমন। তারা দুজন একই। তাদের আত্মা এক। শুধুমাত্র লীলারস আস্বাদন করার জন্যে তারা দুটি দেহ ধারন করেছেন। তাদের একজন ছাড়া আরেকজন সম্পূর্ন হয় না। যেমন Krishna জীবন হলে Radha মুক্তি। আবার কৃষ্ণ নিঃস্বাস হলে রাধা প্রঃস্বাস। একজন ফুল হলে আরেকজন গন্ধ। আশা করি আপনারা বুজতে পেরেছেন।
তাহলে কেমন লাগলো আজকের এই পোস্টটি ? কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করবেন যাতে অন্যদেরও উপকার হয়। আজ তাহলে বিদায় দিন। ।। জয় রাধে ।।