Breaking Ticker

কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য কি ? What Is The Difference Between Krishna And Vishnu ?

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

নমস্কার, সনাতন ধর্মের জয়। Sanatan Sikkha র আরো একটি নতুন পোস্টে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই। প্রিয় ভক্তরা আজকের পোস্টে আমি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। বিষয়টি হলো কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য কি ? What Is The Difference Between Krishna And Vishnu ? আপনারা হয়ত অনেকেই এই বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চান বা আপনাদের মনে হয়তো এই বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। যদি এমনটি হয় তাহলে আপনারা একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। তাহলে শুরু করি, সঙ্গে থাকুন।

krishna and vishnu
কৃষ্ণ ও বিষ্ণু

কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুর মধ্যে সাদৃশ্য : Similarity between krishna and vishnu :

অনেকেই বলে থাকেন কৃষ্ণ তো বিষ্ণুর অবতার বা কৃষ্ণ তো বিষ্ণু হতে আসছেন, তাহলে কৃষ্ণ কি করে ভগবান হয় বা আরো অনেক কিছু। প্রথমেই বলে দেই বৈদিক শাস্ত্র বা ধর্মগ্রন্থ অনুসারে কৃষ্ণ এবং বিষ্ণু (krishna and vishnu) কিন্তু একই। যিনি কৃষ্ণ তিনিই বিষ্ণু। কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুর মধ্যে তত্ত্বগত কোন পার্থক্য নেই। অর্থাৎ কৃষ্ণ তত্ত্ব ও বিষ্ণু তত্ত্ব একই বস্তু। বস্তু বলতে এখানে পরম তত্ত্বকে বোঝানো হচ্ছে। উভয়ই ভগবৎ তত্ত্ব, পূর্নতত্ত্ব, শক্তিমান তত্ত্ব। দুজনেই সর্বশক্তিমান। দুজনে একই ব্যাক্তি। তবে হ্যা, কিছু কিছু পার্থক্য আছে যেটা আমি একটু পরেই আলোচনা করবো। আপনারা সঙ্গে থাকবেন।


কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য : Difference Between Krishna And Vishnu :

কৃষ্ণ এবং বিষ্ণু উভয়ে একই হলেও তাদের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য দেখা যায়। যেমন রূপগত পার্থক্য, রসগত পার্থক্য।

ভাবগত পার্থক্য :

কৃষ্ণ হচ্ছেন মাধুর্য্য বিগ্রহ আর ঐশ্বর্য্য মূর্তিতে হলেন নারায়ন বা বিষ্ণু। মানে মাধুর্য্য বিগ্রহ কৃষ্ণই ঐশ্বর্য্য মূর্তিতে নারায়ন বা বিষ্ণু। যেমন মনে করেন একজন ডাক্তার যেমন সারাদিন হাসপাতালে বা চেম্বারে থাকেন তখন সবসময় রোগীদের সাথে কথা বলেন। ঔষধপাতি নিয়ে কথা বলেন। সেবিকাদের আদেশ বা উপদেশ দিয়ে থাকেন। এটা হলো ডাক্তারের ঐশ্বর্যভাব। আর যখন ডাক্তারবাবু বাড়িতে আসেন তখন সন্তানদের সাথে কথা বলেন, খেলা করেন, পরিবারকে সময় দেন, হাসি ঠাট্টা করেন। এটা হলো মধুরভাব। তাহলে বুজতেই পারলেন কৃষ্ণ হলো মাধুর্য্য বিগ্রহ বা মধুরভাব বিগ্রহ আর বিষ্ণু হলেন ঐশ্বর্যভাব বিগ্রহ।

রূপগত পার্থক্য :

কৃষ্ণ ও বিষ্ণুর (krishna and vishnu) মধ্যে রুপগত কিছু পার্থক্য রয়েছে যেমন, কৃষ্ণ হলেন দ্বিভুজ, মুরলিধর। অর্থাৎ তিনি দুই হাতে বাঁশি বাজান। গোলোকে ও বৃন্দাবনে থাকেন। আর নারায়ন বা বিষ্ণু হলেন চতুর্ভুজধারি। অর্থাৎ তার চারটি হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম থাকে। শ্রীবিষ্ণুর মধ্যে ৬০ টি গুন পূর্নমাত্রায় রয়েছে। আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে ৬৪ টি গুন পরিপূর্ন অবস্থায় বিরাজিত রয়েছে।

রসগত পার্থক্য :

শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু লক্ষীদেবীর মন হরণ করতে পারেন। কিন্তু শ্রীবিষ্ণু কিন্তু কৃষ্ণকান্ত ব্রজগোপিনীদের মন হরণ করতে পারেন না। শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার কথা শ্রবন করে, ব্রজলীলার কথা শ্রবন করে বৃন্দাবনে যেতে চেয়েছিলেন। আবার অন্যদিকে একবার রাসলীলার সময়ে কৃষ্ণ অন্তর্ধ্যান হয়ে গিয়েছিলেন। তখন গোপীরা শুধু কৃষ্ণকে খুঁজছিলেন। তখন কৃষ্ণ নারায়নের রূপ ধারন করেছিলেন। ব্রজগোপীরা নারায়নের দেখা পেলো এবং বললো হে নারায়ন আপনি আমাদের দর্শন দিয়েছেন খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু আপনি কি বলতে পারেন যে আমাদের কৃষ্ণ কোথায় ? আমরা কোথায় কৃষ্ণকে পাবো ? আমরা কৃষ্ণকে চাই। আপনি কৃষ্ণকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন বা আমাদেরকে কৃষ্ণের কাছে পৌছে দিন। তাহলে বুজতেই পারলেন গোপীরা বিষ্ণুকে দেখে আকৃষ্ট হননি। তারা শুধু শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।

কৃষ্ণ সেবা ও বিষ্ণু সেবা :

চলুন এখন আমরা জেনে নেই কৃষ্ণ ও বিষ্ণুর (krishna and vishnu) সেবা সম্পর্কে কিছু কথা। কৃষ্ণ সেবা ৫ টি রসে হয়ে থাকে। যথাঃ শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর। আবার সখ্য রসকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ গৌরব সখ্য ও বিশ্রম্ভ সখ্য। আর বিষ্ণু সেবা ২.৫ টি রসে হয়। ২.৫ টি রস বলতে শান্ত, দাস্য ও গৌরব সখ্যকে বোঝানো হচ্ছে। গৌরব সখ্য মানে খুব একটা ঘনিষ্ট সখা না। তার মধ্যে কিছুটা সম্মানভাব থাকে। যেমন অফিস আদালতের বন্ধু বান্ধবরা বা ব্যাবসায়ী বন্ধু বান্ধবরা। তাদের সাথে আমরা হাত মেলাই, কাজ নিয়ে কথা বলি ইত্যাদি। আর বিশ্রম্ভ সখ্য বলতে যেমন স্কুল কলেজের বন্ধু বান্ধবরা। তারা খুব ঘনিষ্ট হয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে, সামান্য কিছু সবাই মিলে ভাগ করে খায়। এগুলো হলো বিশ্রম্ভ সখ্য। তো কৃষ্ণ সেবা ৫ টি রসেই প্রোগাঢ় ও প্রীতির সাথে হয়ে থাকে। যেমন কেও কৃষ্ণকে নিজের পুত্র বলে সেবা করান। আবার কেও কৃষ্ণকে নিজের ভ্রাতা, সখা বলে সেবা করান। আর বিষ্ণু সেবা ২.৫ টি রসে হয়ে থাকে। শান্ত, দাস্য ও গৌরব সখ্য রসে বিষ্ণু সেবা হয়ে থাকে।

মূল তত্ত্ব কে ?

কৃষ্ণ ও বিষ্ণুর (krishna and vishnu) মধ্যে কৃষ্ণ হলেন মূলদ্বীপ স্বরূপ। আর তা থেকে অসংখ্য বিষ্ণুতত্ত্ব রূপ প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ কৃষ্ণই হলেন মুলতত্ত্ব। তিনি বিষ্ণুর উৎস। অর্থাৎ কৃষ্ণই বিষ্ণুকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন একটি প্রদীপ থেকে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বলানো যেতে পারে। কিন্তু মূল প্রদীপটি হলো কৃষ্ণ। আর অন্যগুলো বিষ্ণুতত্ত্ব।

কৃষ্ণ এবং বিষ্ণু / krishna and vishnu :

কৃষ্ণ স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান হয়েও তিনি নিজেকে ভগবান বলে মনে করেন না। তিনি নিজেকে নন্দের পুত্র, রাধার নাথ বা গোপসখা বলে মনে করেন। কিন্তু বিষ্ণুর মধ্যে একটি ঈশ্বর ঈশ্বর ভাব থাকে। তিনি সেবা করেন। আমাদেরকে কৃপা করেন বা আশীর্বাদ করেন। তাই বিষ্ণু সেবার মধ্যে একটা সংকোচ ভাব থাকে কিন্তু কৃষ্ণ সেবার মধ্যে কোনো সংকোচ থাকে না।

উপসংহার / Conclusion :

প্রিয় ভক্তগন এতক্ষন থেকে কৃষ্ণ ও বিষ্ণুর (krishna and vishnu) মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা আলোচনা করা হলো। তারা দুজনে একই। তাদের মধ্যে তত্ত্বগত কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু তাদের মধ্যে রসগত পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। আশা করি আপনাদের ভালোভাবে বুঝাতে পেরেছি। তাহলে কেমন লাগলো আজকের পোস্টটি কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। আজ তাহলে এতটুকুই। ধন্যবাদ। ।। জয় রাধে।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.