প্রিয় সনাতনি ভক্তরা, আজকে sanatan sikkha খুবই একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চলেছে। বিষয়টি জানতে পেরে সত্যি চোখে জল এসে যাবে। বিষয়টি হলো যে, কেন Radharani শ্রীকৃষ্ণের মাথায় তার চরনধূলি দিয়েছিলেন ? আর যার চোখে জল আসবে না তাহলে বুজতে হবে যে তার অপরাধ প্রচুর। তাহলে দেরি না করে আসল ঘটনাটি শুরু করি। দয়া করে আপনারা সঙ্গে থাকবেন।
নারদ মুনি :
একসময় নারদমুনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে এসেছিলেন তাকে দিয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞ করাতে। তখন শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে তার আট পত্নী ও Radharani ও ছিলেন। রাধারানি ঠিক করেন যে শ্রীকৃষ্ণের সাথে দেবি রুক্মিণী অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ মনে মনে চাইত যে তিনি দেবি রাধাকে নিয়ে অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন। তাই তিনি সবাইকে পরীক্ষা করার জন্যে বলেন অশ্বমেধ যজ্ঞ করার আগে আমি মহাদেবের মন্দিরে গিয়ে মহাদেবের পূজা দিতে চাই। মহাদেবের পূজা দিতে শ্রীকৃষ্ণের সাথে তার আট পত্নী, নারদমুনি ও দেবি রাধাও যান।
Radharani র চিন্তা ও ত্যাগ :
রাধারানির শুধু কৃষ্ণকে নিয়ে চিন্তা। তিনি চিন্তা করেন যে কৃষ্ণ খালি পায়ে মহাদেবের মন্দিরে যাবে মহাদেবের পূজা করতে, যদি তার পায়ে কোনো কাঁটা বিধে যায় ? বা রাস্তায় অনেক পাথর রয়েছে যদি তার পা ব্যাথা হয়ে যায়।
সবাই মিলে যাচ্ছিলো মহাদেবের মন্দিরে। কিন্তু Radharani সবার পিছনে ছিলো। তা দেখে যখন বলরাম রাধারানিকে জিজ্ঞাসা করে যে, কি ব্যাপার কৃষ্ণের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে চলার রাধা আজ পিছনে কেন ? তখন রাধারানি বলে দাউ, কৃষ্ণ সর্বদাই আমার হৃদয়ে আছে কিন্তু রুক্মিণী ও বাকি স্ত্রীদেরও তো কৃষ্ণের সাথে চলার সুযোগ পাওয়া উচিত। রাধারানির এইরকম ত্যাগ দেখে নারদমুনি ও বলরাম সত্যি অবাক হয়ে যায়।
শ্রীকৃষ্ণের পায়ে কাঁটা বিধা :
মহাদেবের মন্দিরে যাওয়ার পথে হঠাৎ করে শ্রীকৃষ্ণের পায়ে অনেকগুলো কাঁটা বিধে যায়। যা দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে পড়ে এবং দুঃখ প্রকাশ করে ও ব্যাথা অনুভব করে। শ্রীকৃষ্ণ নিজেই তার পায়ের কাঁটা বের করতে চাইলে তার স্ত্রীরা তাকে বলে হে শ্রীকৃষ্ণ, আপনার পা থেকে কাঁটা বের করা সৌভাগ্য আপনি আমাদেরকে দিন। তাতে শ্রীকৃষ্ণ রাধার দিকে তাকিয়ে তার থেকে অনুমতি নিয়ে রাজি হন। তারপর সকল স্ত্রীরা তার পা থেকে কাঁটা বের করে এবং নারদনমুনিও শ্রীকৃষ্ণের পা থেকে একটি কাটা বের করে।
কাঁটা বের করার সময় শ্রীকৃষ্ণের পা থেকে যেমন রক্ত বের হয় তেমনি Radharani র মুখ থেকেও রক্ত বের হয়। আসলে রাধা কৃষ্ণ তো একই। তারা দুই দেহ এক আত্মা। তাই এমনটি হয়েছিল। রাধারানি দেবি রুক্মিণীকে কৃষ্ণের সাথে অশ্বমেধ যজ্ঞ করার সুযোগ দিয়েছিলেন বলে তিনি তার ভাগের কাঁটা বের করার সুযোগটিও তিনি রুক্মিণীকে দিয়েছিলেন। তাই তিনি শ্রীকৃষ্ণের পা থেকে কাঁটা বের করেন নি। এর জন্য তাকে অনেক অপমানও সহ্য করতে হয়েছিল শ্রীকৃষ্ণের বাকি স্ত্রীদের থেকে।
যাই হোক এরপর মহাদেবের পূজা হলো। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের পায়ে কাঁটা বিধার কারনে তিনি চলতে পারছিলেন না। তা দেখে নারদমুনি বলেন প্রভু আপনি আমাকে সাহায্য করতে দিন। আপনি আমাকে ভর করে চলুন। এভাবে শ্রীকৃষ্ণ এবং বাকি সবাই সেখান থেকে ফিরে আসে। কিন্তু রাধারানি সেখানেই থেকে যায়। যা শ্রীকৃষ্ণের কাছে খুব দুঃখের মুহূর্ত ছিল।
শ্রীকৃষ্ণের মাথায় অসহ্য ব্যাথা :
তারা সেখান থেকে মানে মহাদেবের মন্দির থেকে বেরিয়ে আসলো। এরপর শুরু হলো শ্রীকৃষ্ণের পরীক্ষা করার সময়। তিনি আসলে জানতে চেয়েছিলেন যে তাকে কে কতটা ভালোবাসে ? পরীক্ষা করার জন্যে তিনি মহাদেবকে ইশারা দিয়ে বলেন তার মাথায় অসহ্য ব্যাথা দিতে। শ্রীকৃষ্ণ হলো মহাদেবের আরাধ্যা। তার কথা মহাদেব কোনোদিনও অমান্য করতে পারে না। তাই তিনি শ্রীকৃষ্ণের মাথায় অসহ্য ব্যাথা ও যন্ত্রনা দেন। এবং ব্যাথায় শ্রীকৃষ্ণ এক জায়গায় বসে পড়েন।
তার মাথার এইরকম ব্যাথা দেখে শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীরা প্রচন্ডভাবে দুঃখ পান এবং তা নিবারনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে তো কোনো বৈদ্য ছিলো না। তাই তার স্ত্রীদের মধ্যে একজন যায় বৈদ্যকে ডাকতে, আরেকজন যায় জল আনতে। শ্রীকৃষ্ণ তখন রুক্মিণীকে বলেন তুলসী পাতা আনতে এবং সাথে এও বলেন যে তিনি তুলসী পাতা মহাদেবের মন্দিরে দেখেছিলেন। আর সেখানে তো দেবী Radharani রয়েছেন। আসলে শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণীকে দিয়ে তুলসী পাতা আনতে নয় বরং দেবী রাধাকে ডাকতে পাঠিয়েছিলেন।
তারপর রুক্মিণী যখন মহাদেবের মন্দিরে তুলসীপাতা আনতে যায় তখন রাধারানি দেখে রুক্মিণীকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি তুলসী পাতা কেনো নিচ্ছেন ? উত্তরে রুক্মিণী বলেন শ্রীকৃষ্ণের মাথায় অসহ্য ব্যাথা হয়েছে তাই তিনি আমাকে তুলসী পাতা নিতে বলেছেন। এই কথা শুনে Radharani দৌড়ে ছুটে আসেন শ্রীকৃষ্ণের কাছে। তুলসী পাতা সেবন করার পরেও শ্রীকৃষ্ণের মাথার ব্যাথা গেলো না।
শ্রীকৃষ্ণ তখন তার স্ত্রীদের বললেন, যদি আপনারা কেও আপনাদের চরণধূলি আমার মাথায় মেখে দেন তাহলে আমার মাথা ব্যাথা চলে যাবে। এই কথা শুনে তার স্ত্রীরা বলতে লাগলো যে, এটা করা তো পাপ হবে, নরক ভোগ করতে হবে। আমরা এই পাপের ভাগী হতে চাই না। তারপর তিনি নারদমুনিকে বললেন আপনিও তো আমার ভক্ত তাহলে আপনি আমার মাথায় চরণধূলি দেন। কিন্তু নারদ মুনিও পাপ হওয়ার ভয়ে না করেন। তারপর শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণীকে বললেন। এদিকে রুক্মিণীও তার চরণধূলি দেন না। আর বলেন শ্রীকৃষ্ণ, আমি সারাজীবন আপনার পত্নী হয়ে থাকতে চাই, এই পাপ করে আমি আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবো না। আপনি বরং আমার প্রান নিয়ে নেন। আমি তাতেও রাজি।
শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে কালিয়া নাগ দমন করেছিলেন ?
কৃষ্ণ ও বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য কি ?
শ্রীকৃষ্ণের মাথায় Radharani র চরণধূলি :
সব কথা রাধারানী শুনে তিনি বললেন আমি শ্রীকৃষ্ণের মাথায় চরণধূলি দিব। তাতে রুক্মিণী রাধাকে বারন করে। তিনি রাধাকে বলেন যে এতে পাপ হবে। শ্রীকৃষ্ণ থেকে দূরে থাকতে হবে। নরক ভোগ করতে হবে। কিন্তু Radharani তাতেও রাজি। তিনি বলেন আমি এ সবকিছুর জন্যে রাজি আছি কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের মাথায় যে যন্ত্রনা হচ্ছে এটা আমি সহ্য করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন যদি শ্রীকৃষ্ণকে একটুখানি ভালো রাখার জন্যে আমাকে সাত জন্ম নরকে থাকতে হয় আমি তাতেও রাজি। এই হলো রাধা কৃষ্ণের প্রেম যা সবাই বুজতে পারে না। সবশেষে রাধারানি শ্রীকৃষ্ণের মাথায় তার চরণধূলি মেখে দেয় আর তাতে শ্রীকৃষ্ণের মাথা ব্যাথা চলে যায়।
উপসংহার :
ভক্তগন কেমন লাগলো আজকের কাহিনীটি ? কমেন্ট করে জানাবেন। এবার তো আপনারা বুজতে পারলেন যে কেন Radharani শ্রীকৃষ্ণের মাথায় তার চরনধূলি দিয়েছিলেন ? আর এইরকম সনাতনী কাহিনী জানার জন্যে আমার এই sanatan sikkha র সাইটে সবসময় জড়িয়ে থাকবেন। ঈশ্বর আপনাদের সবাইকে ভালো রাখুক। জয় রাধে