Breaking Ticker

লীলাধারী শ্রীকৃষ্ণ কেন govardhan parvat উঠিয়েছিলেন ?

সবাইকে নমস্কার জানিয়ে আমি আজকের পোস্টটি শুরু করছি। Sanatan Sikkha র আজকের পোস্টটি কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি পোস্ট। আজকের পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন, লীলাধারী শ্রীকৃষ্ণ কেন govardhan parvat উঠিয়েছিলেন ? তিনি কেন এইরকম লীলা করেছিলেন ? সমস্ত কিছুই থাকবে আজকের পোস্টে। বিস্তারিত জানতে পড়তে থাকুন। ছোটবেলা থেকেই আমরা মা বাবা কিংবা গুরুজনের কাছে শুনতাম যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নাকি তার বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে govardhan parvat উঠিয়েছিলেন। কিন্তু এই কাহিনীর বিস্তারিত হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। চলুন তাহলে ঘটনাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত্য জেনে নেই।

 

govardhan parvat
গোবর্ধন পর্বত লীলা


দেবরাজ ইন্দ্রের পূজা :

এক সময়ে ব্রজবাসীরা অর্থাৎ বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিরা মিলে ইন্দ্রদেবের পূজার আয়োজন করছিলেন। দেবতাদের পূজা করা কিন্তু কোনো খারাপ কাজ নয়। শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসার সহিত পূজা করা খুবই পুণ্যের কাজ। কিন্তু বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিরা যে ইন্দ্রদেবের পূজা ভয়ে করতেন। কারন তারা জানতেন ইন্দ্রদেবের পূজা না করলে তিনি রাগ হবেন এবং সময়মতো বৃষ্টি দিবেন না বা রোদ দিবেন না। এবং তাতে ভালো ফসল হবে না। গাছ গাছন্ত ভালো হবে না। যার ফলে গাছের ফল হবে না এবং ঔষধ তৈরী করা যাবে না। তাদের সামনেই ছিল govardhan parvat সেখানে গরু বাছুর খাবার খেতে পারবে না। এইসব ভয়ের কারনই বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিরা ইন্দ্রদেবের পূজা করতো। এই পূজায় তারা ইন্দ্রদেবকে খুশি করার জন্যে প্রচুর পরিমানে দুধ, ঘি, মাখন দিত। এমনকি তারা পশুবলিও দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল।

শ্রীকৃষ্ণের প্রতিক্রিয়া :

এই সমস্ত আয়োজন দেখে সেখানে শ্রীকৃষ্ণ আসলেন এবং তার পিতা নন্দরাজাকে বুঝাতে লাগলেন। তিনি তার পিতাকে বললেন আপনারা এতসব আয়োজন করছেন শুধুমাত্র ইন্দ্রদেবকে খুশি করার জন্য। কিন্তু ভয় করে যদি কোনো পূজা করা হয় তাহলে তো সেই পূজা কোনো কাজে লাগে না। ভক্তি আর শ্রদ্ধা যদি না থাকে তাহলে কোনো পূজাই সার্থক হয় না। আর যে ব্যাক্তি দুধ, ঘি, মাখনের জন্যে আপনাদেরকে দিয়ে পূজা করাচ্ছে এমনকি নিজের স্বার্থের জন্যে কোনো নির্দোষ প্রাণীর হত্যা পর্যন্ত্য করাচ্ছে সেই ব্যাক্তি পূজার কোনো যোগ্যই না। শ্রীকৃষ্ণের এই কথা শুনে তার পিতা এবং বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিরা তাকে বলে তাহলে এখন আমরা কি করবো ? ইন্দ্রদেবের পূজা না করলে তো তিনি রাগ হয়ে যাবেন এবং ঝড় ও বৃষ্টি দিয়ে সব কিছু ভাসিয়ে দিবেন। এও হতে পারে যে তিনি সময়মতো রোদ দিবেন না বা বৃষ্টিও দিবেন না। তখন শ্রীকৃষ্ণ বলে ইন্দ্রদেবকে রোদ ও বৃষ্টি দিতেই হবে কারন এটা তার কাজ। তিনি আরও বলেন, তিনি বলেন পূজা যদি করতেই হয় তাহলে আমরা govardhan parvat কে পূজা করবো। কারন সেখানে গরু বাছুর খাবার খায় তারপরে আমাদেরকে দুধ দেয়। আর আমরা সেই দুধ দিয়ে ঘি, মাখন, মিষ্টান্ন বানিয়ে সেবা করি। শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিরা গোবর্ধন পর্বতকে পূজা করতে রাজি হয়ে যান।

ইন্দ্রদেবের ক্রোধ :

বালক শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে এবং তার কোথায় বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসি govardhan parvat পূজা করার জন্যে রাজি হওয়ায় দেবরাজ ইন্দ্রদেব ভীষনভাবে রেগে যান। এবং অকারনেই তিনি সেখানে তুমুলভাবে বজ্রপাত করান ও ভারি বৃষ্টি করিয়ে সব কিছু ভাসিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা করেন। এই সমস্ত ঘটনা দেখে বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিরা শ্রীকৃষ্ণকে বলেন এখন ইন্দ্রদেবের প্রকোপ থেকে কে রক্ষা করবে। যার সাথে শ্রীকৃষ্ণ থাকেন তাকে কি আবার রক্ষা করার দরকার হয় বলেন ? যাই হোক শ্রীকৃষ্ণ বলেন এই গোবর্ধন পর্বতই আমাদের রক্ষা করবে। কিন্তু আমাদের সবাইকে সমস্ত ভয় ও চিন্তা ছেড়ে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রেম দিয়ে এই পর্বতকে উঠিয়ে তার নিচে আশ্রয় নিতে হবে। তাহলেই ইন্দ্রদেবের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অবশ্যই সবাই বলেন এতো বড়ো পর্বত উঠানো কি করে সম্ভব ? উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলেন এই দুনিয়ায় প্রেম থেকে অধিক শক্তিশালী আর কিছুই নেই। আমরা সবাই যদি সম্পূর্ন প্রেম দিয়ে এই পর্বতকে উঠাই তাহলে অবশ্যই উঠবে এবং আমরা তার নিচে আশ্রয় নিতে পারবো।

শ্রীকৃষ্ণের govardhan parvat উঠানো :

তারপর সবাই মিলে গোবর্ধন পর্বতের দিকে গেলেন এবং গোবর্ধন পর্বতকে উঠানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কি সম্ভব বলেন তো ? তারপর শ্রীকৃষ্ণ এলেন এবং তিনি তার বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে govardhan parvat উঠালেন এবং সেই পর্বতের নিচে সবাই আশ্রয় নেন। আর অন্যদিকে দেবরাজ ইন্দ্রের ক্রোধ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং তিনি গোবর্ধন পর্বতের দিকে শ্রীকৃষ্ণকে ও বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিদের আক্রমন করতে থাকেন। কিন্তু দেবরাজ ইন্দ্র কিছুতেই বুজতে পারেননি যে সেই বালক কৃষ্ণই হলো স্বয়ং ভগবান। তাই তিনি টানা ১৫ দিন ধরে সেখানে আক্রমন করেন আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে টানা ১৫ দিন ধরে গোবর্ধন পর্বত উঠিয়ে রেখে বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিকে রক্ষা করেছিলেন। এবং তাদের ক্লান্তিভাব দূর করার জন্যে বাঁশিও বাজিয়েছিলেন।

দেবরাজ ইন্দ্রদেবের আক্রমন :

ইন্দ্রদেব তখনও বুজতে পারেননি যে ব্রজবাসীদের স্বয়ং ভগবান রক্ষা করছেন। এবার ইন্দ্রদেব বিদ্যুৎ ও বর্ষার সাথে সাথে অস্ত্র দিয়েও govardhan parvat এর দিকে ও তার নিচে আশ্রয়কারি বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিদের এমন কি বালক কৃষ্ণকেও করা শুরু করে দেয়। ইন্দ্রদেবের একের পর এক যখন সব অস্ত্র বিফলে যায় তখন তিনি আরও বেশি ক্রোধে তার বজ্র দিয়ে প্রহার করলেন। যখন বজ্রও কিছু করতে পারলো না তখন তিনি হার মেনে মহাদেবকে স্মরণ করলেন। ইন্দ্রদেব মহাদেবকে বলেন আমার মার্গ দর্শন করুন আর কে এই বালক কৃষ্ণ যার কাছে আমার বজ্র পর্যন্ত্য হার মেনে গেলো। মহাদেব বলেন ক্রোধে দেখলে চিনতে পারবে না কিন্তু প্রেমের চোখে দেখলে অবশ্যই চিনতে পারবে। তখন ইন্দ্রদেব বালক কৃষ্ণকে ও দেবী রাধাকে চিনতে পারেন। এইভাবে দেবরাজ ইন্দ্রদেবের অহংকার চূর্ণ হয়ে যায়।


বালক কৃষ্ণের কাছে দেবরাজ ইন্দ্রের ক্ষমা প্রার্থনা :

সবশেষে ইন্দ্রদেব তার সমস্ত ভুল বুজতে পেরে বিদ্যুৎ ও বর্ষা থামিয়ে দেন ও তিনি তার ভুলের জন্যে বালক কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এবং তার কথা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ তাকে শ্রী হরি বিষ্ণুর রূপ দর্শন করান। আর তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাচও একটি প্রতিজ্ঞাও নেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে বলেন হে প্রভু, তুমি আমার পুত্র অর্জুনকে সবসময় রক্ষা করবে আর আমি কিছু চাই না। ইন্দ্রিদেবের এই কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মেনে নেন। তাই তো মহাভারতের সময় শ্রীকৃষ্ণ সবসময় অর্জুনের সাথে ছিলেন এবং তাকে রক্ষা করেছিলেন। 

উপসংহার :

ঝড় বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় আবার বৃন্দাবনবাসি ও বরসানাবাসিরা সমস্ত কিছু ভুলে নৃত্য করতে লাগলেন। আশা করি এবার আপনারাও বুঝে গেছেন যে কেন লীলাধারী শ্রীকৃষ্ণ govardhan parvat উঠিয়েছিলেন। পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগলো কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। আজ তাহলে এইটুকু। খুব তাড়াতাড়ি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে উপস্থিত হবো। জয় রাধে।

FAQ :

কেন শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত উঠিয়েছিলেন ?

একমাত্র দেবরাজ ইন্দ্রদেবের অহংকার চূর্ণ করার জন্যে শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত উঠিয়েছিলেন।


শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত কতদিন ধরে উঠিয়ে রেখেছিলেন ?

শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বত প্রায় ১৫ দিন ধরে উঠিয়ে রেখেছিলেন।

 






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.