সবাইকে প্রনিপাত। প্রিয় সনাতনী ভক্তরা আজকে যে অমূল্য পোস্টটি আপনারা পড়বেন তা পড়ে সত্যি আপনাদের চোখে জল চলে আসবে। আজকে যেই কাহিনীটি নিয়ে আলোচনা করবো, সেটা হলো কৃষ্ণ সখা Sudama কে নিয়ে। কেনো তিনি কৃষ্ণের সখা হওয়া সত্ত্বেও এতো গরীব ছিলেন ? শ্রীকৃষ্ণ তো দ্বারকার রাজা ছিলেন আর তার প্রিয় সখা এতো গরীব ? সত্যি ভাবতে অবাক লাগে তাই না ? কিন্তু এর পিছনে রয়েছে এক গভীর রহস্য। যা হয়তো অনেকেই জানেন না। Sudama কৃষ্ণের সখা তো বটেই কিন্তু তার সাথে তিনি কৃষ্ণাভক্তও ছিলেন। পুরো বিষয়টা আমরা Sanatan Sikkha র এই পোস্টটির মাধ্যমে জানার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন দেরি না করে শুরু করি।
সুদামার জীবনকাহিনী |
কে ছিলেন Sudama :
Sudama ছিলেন একজন ব্রাম্মন পন্ডিত। গুরু সন্দীপনি মুনির আশ্রমে সুদাম, শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম একসাথে বিদ্যা অর্জন করেছিলেন। আর সন্দীপনি মুনির আশ্রমেই শ্রীকৃষ্ণ ও সুদামার বন্ধুত্ব হয়। তারা দুজনে একসাথে অনেক সময় কাটিয়েছেন। সখা বলে কথা। সুদামার আত্মজ্ঞান পরিপূর্ন ছিল। আধ্যাত্মিকতার দিক থেকে তিনি কিন্তু ধনী ছিলেন। সুদামা ধর্ম পরায়ন ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি ধর্মকে বিশ্বাস করতেন। সংসারে থেকেও তার কোনো লোভ বা মোহ ছিল না। কৃষ্ণভক্ত সুদামা অনাহারে দিনযাপন করতেন তবুও ধর্মকে ত্যাগ করতেন না। তিনি ভিক্ষা করে দিন যাপন করতো। তবে শুধু পাঁচটি বাড়িতে ভিক্ষা চাইতেন। আর তা দিয়েই দিন কাটাতেন। পাঁচটি বাড়ি থাকে যদি কেও ভিক্ষা নাও দিতো তবুও তিনি আরেকটি ঘরে যেতেন না ভিক্ষা চাওয়ার জন্যে। সেদিন তিনি, তার পত্নী বসুন্ধরা ও তার সন্তানেরা অনাহারেই দিন কাটাতেন। সুদামার এইরকম দুঃখ দেখে তার সখা শ্রীকৃষ্ণ ও তার সাথে দেবী রুক্মিনিও দুঃখ পেতেন। তারা তাকে সাহায্য করতেন কিন্তু Sudama কোনো ফল পেতো না কারন, কথাই তো আছে যে ভাগ্যে না থাকলে লোকে টাকার বস্তাও চোখে দেখে না। সুদামার অবস্থা ঠিক সেইরকমই ছিল।
কেমন ছিল সুদামার চরিত্র :
কেমন ছিল সুদামার চরিত্র ? কেমনই বা ছিল তার ব্যবহার ? আসুন তাহলে জেনে নেই। Sudama ছিল একজন দরিদ্র ব্রাম্মন। তিনি খুবই সহজ সরল ও সাধারন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সখা ছিলেন কিন্তু তার সাথে তিনি কৃষ্ণভক্ত ছিলেন। ভক্ত সুদামা ও তার স্ত্রী এবং সন্তানেরা অনাহারে থাকতেন তবুও তিনি ধর্মকে ত্যাগ করতেন না। বরং, তিনি ধর্ম কথা ও কৃষ্ণ কথা প্রচার করতেন। তিনি সব কিছুই ভাগ্য এবং তার সখা শ্রীকৃষ্ণের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। মানে তিনি তার জীবনের সব কিছু কৃষ্ণের উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর এমন চরিত্রের মানুষকে শ্রীকৃষ্ণ খুব ভালোবাসেন। সুদামা এমন মানুষ ছিলেন যে তার পরিবারের জন্যে তিনি মুক্তিও পেতে চাইতেন না। তার জীবনের চেয়ে তার ধর্মতকেই তিনি বেশী মূল্য দিতেন। এইরকম চরিত্রের মানুষ ছিলেন কৃষ্ণসখা সুদামা।
কি কারনে সুদামা গরীব হয়েছিলেন :
সুদামার গরীব হওয়ার পিছনে রয়েছে এক গভীর রহস্য। এই রহস্যটি শুরু হয়েছিল তখন, যখন শ্রীকৃষ্ণ ও সুদামা একসাথে বিদ্যা গ্রহন করতেন। সেই সন্দীপনি মুনির আশ্রমেই রহস্যটি শুরু হয়েছিল যেখানে কৃষ্ণ ও সুদামা বিদ্যা শিক্ষা নিতেন। এমন কি কারন ছিল যে কৃষ্ণ ও সুদামা একই জায়গা থেকে বিদ্যা শিক্ষা নেওয়ার পর Sudama গরীব হয়েছিলেন আর অন্যদিকে কৃষ্ণ রাজা। তারা দুজনে তো সখাও ছিল। এবারে রহস্যটি জেনে নেই।
আরও পড়ুন :
কৃষ্ণ ও বিষ্ণুর মধ্যে পার্থক্য কি ?
শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত লীলা।
রহস্য :
সন্দীপনি মুনির আশ্রমের পাশে এক এক কুটিরে বৃদ্ধা থাকতেন। তিনিও ভিক্ষা করে তার দিন কাটাতেন। একবার কি হয়েছিল, তিনি পাঁচদিন ধরে কোনো ভিক্ষা পাননি। ফলে তিনি পাঁচদিন অনাহারে ছিলেন। কোনো কিছুই সেবা করতে পারেননি। ছয় নাম্বার দিনে তিনি কিছু ছোলা ভিক্ষা পান কিন্তু তিনি তাও সেবা করেন না বরং সেটাকে একটি লাল কাপড়ে বেঁধে রেখে দেন। কারন তিনি মনে মনে ভেবেছিলেন যে, পরেরদিন সকালে ঠাকুরকে ভোগ দিয়ে তবেই সেই ছোলা সেবা করবেন। সেই বৃদ্ধার ভাগ্যটা দেখুন, সেই রাতেই ওই বৃদ্ধার কুটিরে ডাকাত আসে। ডাকাতেরা সব কিছু তন্ন তন্ন করে খুঁজেন কিন্তু কিছুই পান না। অবশেষে তাদের নজর কাপড়ে বাঁধা সেই ছোলার পুটলির উপর পড়ল। কাপড়ে বাঁধা ছোলার পুটলি দেখতে পেয়ে সেই ডাকাতেরা মনে মনে ভেবেছিলেন যে ওই পুটলিতে বুঝি অনেক স্বর্ণ অলংকার রয়েছে। তাই তারা সেই পুটলিকে নিয়ে যান এবং সন্দীপনি মুনির আশ্রমে লুকান।
Sudama অভিশাপের স্বীকার হন কেন :
কাপড়ে বাঁধা পুটলিটি নিয়ে ডাকাতেরা যখন সন্দীপনি মুনির আশ্রমে লুকান ঠিক সেইসময়ে সেইখান থেকে Sudama এবং কৃষ্ণের গুরুমাতা আসছিলেন। তাদের গুরুমাতা আসার শব্দ শুনে ডাকাতেরা ভয়ে কাপড়ে বাঁধা সেই ছোলার পুটলিটিকে সেইখানেই ফেলে চলে যান। অবশেষে ছোলার পুটলিটিকে গুরুমাতা পান এবং পরের দিন সকালে তিনি সেটা সুদামা দিয়ে বলেন কৃষ্ণের সাথে সেবা করতে।
আবার অন্যদিকে সকালে উঠে সেই বৃদ্ধা যখন তার ছোলার পুটলি পায় না, তখন তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে তার ছোলার পুটলি চুরি হয়ে গেছে। তাই তিনি রাগে অভিশাপ দেন যে আমার ছোলা যে খাবে তার অবস্থা আমার মতোই হবে। আবার Sudama ছিলেন একজন আত্মজ্ঞানী পুরুষ। তিনি ছোলা দেখেই বুঝে গিয়েছিলেন যে এই ছোলার মধ্যে অভিশাপ রয়েছে। কিন্তু তাদের গুরুমাতা তাকে সেবা করতে দিয়েছিল বলে সুদামা ছোলাগুলিকে ফেলেও না আর তার সখা কৃষ্ণকে দেয়ও না। তিনি ছোলাগুলিকে একাই সেবা করেন। আর এই কারনই সুদামা গরিব হয়ে রইলেন।
সুদামার মিথ্যা বলা :
সুতরাং শ্রীকৃষ্ণকে অভিশাপের হাত থেকে রক্ষা করতে সুদামা ছোলাগুলিকে একাই সেবা করেন। কিছুক্ষন পরে কৃষ্ণ এসেছিলো সুদামার কাছে। এসে Sudama কে বলেন গুরুমাতা বলে সেবা করার জন্যে ছোলা দিয়েছে, তা কোথায় আমাকে দেও। সুদামা বলেন ছোলা পড়ে গিয়েছে। এই যে মিথ্যা কথাটা বলে শ্রীকৃষ্ণকে, এতেও তার অপরাধ হয়েছে। তখন শ্রীকৃষ্ণ সুদামাকে বলেছিলেন মিত্র সুদামা আমাকে তুমি মিথ্যা কথা বললে, তবে আমিও বলছি একদিন না একদিন তুমি ঠিক আমার জন্যে খাবার কিছু নিয়ে আসবেই।
দ্বারকার পথে সুদামার গমন :
সুদামার জীবন খুব কষ্টে কাটতো। তার সাথে তার পত্নী ও সন্তানদেরও জীবন খুব কষ্টের ছিলো। তাদের দরিদ্রতা চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। একদিন সুদামার পত্নী Sudama কে বলে ওগো তোমার সখা শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকার রাজা। আর আমি শুনেছি তিনি খুবই দয়ালু। তুমি একবার তার কাছে যাও, দেখবে আমাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রথমে সুদামা অস্বীকার করে বলে, আমি আমার সখার কাছে অর্থ চাইতে পারবো না। কিন্তু সুদামার পত্নী সুদামাকে জোর করে বলে, অর্থ না চাইতে পারলে একটা কাজ চেয়ে নিয়ো। তাতেও আমাদের দরিদ্রতা ঘুচে যাবে। সুদামা বলে আমি আমার সখার কাছে কিছু চাইতে পারবো না। তবে আমি আমার সখার সাথে দেখা করার জন্যে যেতে পারি। কিন্তু কি নিয়ে যাবো ? সখাকে আমি কি দিবো ? অবশেষে সুদামা তাদের কুটিরে রাখা কয়েক মুষ্ঠি চাল ও কিছু খুদের নাড়ু নিয়ে দ্বারকার পথে গমন শুরু করে।
কৃষ্ণ সুদামা মিলন :
Sudama দ্বারকায় এলে, সেখানকার সবাই সুদামার ছেড়া বস্ত্র, শরীরের নোংরা অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যান। কৃষ্ণ সুদামার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তার আসন ছেড়ে চলে আসেন। সুদামাকে দেখার জন্যে তিনি দৌড়ে এসে সুদামাকে আলিঙ্গন করেন। এখানে ভাবুন ভক্ত আর ভগবানের মিলন হচ্ছে। আঃ কি সেই দৃশ্য ভাবলে এখনো আমার চোখ দিয়ে জল চলে আসে। সুদামা দ্বারকায় আসায় শ্রীকৃষ্ণ তাকে নিয়ে গিয়ে তার আসনে বসান, তার চরণামৃত করেন, তার জন্যে সেবার ব্যবস্থা করেন, তাকে নতুন বস্ত্র দেন। এবং দেবী রুক্মিণী স্বয়ং তাকে পক্যা দিয়ে শীতল বায়ু প্রদান করেন। কৃষ্ণের দুয়ারে অতিথি সেবায় সুদামা খুব খুশি হন কিন্তু তিনি কৃষ্ণকে তার কাজের কথা বলতে পারেন না। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তো ভগবান। তিনি সবই জানেন যাই হোক সুদামা সেখান থেকে ফিরে আসেন।
সুদামার সহযোগিতায় শ্রীকৃষ্ণ :
নিজের কুটিরে Sudama এসে দেখে সব উল্টা হয়ে গেছে। মানে তার কুটির সোনার মহলে পরিনত হয়েছিল। তাছাড়াও তাদের মহলে সোনাদানা, হীরামতি তে ভরপুর হয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয় তাদের মহলে ভোজনেরো কোনো অভাব ছিলো না। এই অবস্থা দেখে সুদামা বুজতে পারেন যে, এ সবই তার সখা কৃষ্ণের কৃপায় হয়েছে।
উপসংহার :
আজকের পোস্টে আপনারা পড়লেন কৃষ্ণের সখা Sudama কেনো গরিব ছিলেন ? পোস্টটি কেমন লাগলো আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। আর যদি আপনাদের মনে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাকে বলবেন আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। পোস্টটিতে যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে Sanatan Sikkha এর জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী।