আজকে আমি আপনাদের কাছে এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, যা জানতে মোটামোটি সবারই একটা ইচ্ছা থাকে। আজ আমি এমন একটি কমোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যা সত্যি সবার জানা উচিত। আর সেই বিষয়টি হলো Gurudev সেবা বা বৈষ্ণব সেবা দিলে কি হয় ? Gurudev সেবা বা বৈষ্ণব দিলে কি ফল লাভ হয় ? জানার জন্যে কটাল নামে এক ব্যাক্তির গল্প অবশ্যই শুনতে হবে। তাহলে পড়তে থাকুন এবং সঙ্গে থাকুন।
Gurudev বা বৈষ্ণব সেবার মহাত্ম |
কটালের গল্প :
তুঙ্গাভদ্রা নদীর পারে কটাল নামে এক ব্যাক্তি বাস করতো। সে একজন পাপী ছিলেন। এমন কোনো পাপ কাজ নয়, যা তিনি করেননি। তার কাছে কিঞ্চিৎমাত্র ধর্ম জ্ঞান ছিল না। তিনি এতাও বুজতেন না যে কোনটা সাধারন মানুষ, কোনটা বৈষ্ণব বা Gurudev, এতটাই পাপী ছিলো সে। তিনি শুধু লোকেদের উপর অন্যায় ও অত্যাচার করতেন। পশু হত্যা, নারী হত্যার মতোও জঘন্য পাপ করেছিলেন তিনি। মানে এককথায় বলতে গেলে এমন কোনো পাপ কাজ নেই জা তিনি করেননি। তার মনে কোনো মায়া দয়া বা কোনোরকম আত্মজ্ঞান ছিলনা।
কটালের গৃহে Gurudev এর আগমন :
একদিন খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছিলো। সেই সময় সেই ঝড় বৃষ্টিতে এক Gurudev বা বৈষ্ণব আটকে পড়ে। তাও আবার কটালের গৃহের পাশে। তারপর তিনি কটালের গৃহে আসে। তখন কটাল গৃহেই ছিল। এবং তিনি জানতে পারেন যে তার গৃহের বারান্দায় কেও একজন এসেছেন। যিনি এসেছিলেন তিনি একজন খাটি Gurudev বা বৈষ্ণব ছিলেন। কিন্তু গুরুদেব বা বৈষ্ণবরা যে কি জিনিস এ কথা তো আর কটাল জানতো না। সে তো এটাও জানতো না যে তার গৃহে একজন গুরুদেব বা বৈষ্ণব এসেছেন। যাই হোক সেই গুরুদেব বা বৈষ্ণবকে দেখে কটালের মনে একটু মায়া হলো এবং তিনি তাকে তার গৃহে আশ্রয় দেন। কিছুক্ষন পর ঝড় বৃষ্টি কমে যায় এবং কটালের গৃহ থেকে সেই গুরুদেব বা বৈষ্ণব চলে যান। এই ঘটনা হওয়ার কিছুদিন পরে কটালের মৃত্যু হয়ে যায়।
এটাও পড়ুন :
দীক্ষা কি ? গুরুদেবের কাছ থেকে দীক্ষা নিতে হয় কেন ?
শনিদেবের কুদৃষ্টি থেকে কিভাবে বাঁচা যায় ?
যমরাজার কাছে কটাল :
কটালের মৃত্যুর পর তিনি গেলো যমরাজের কাছে। এবার তার হিসেব দেওয়ার পালা যে তিনি কটাল হয়ে জন্ম নিয়ে কি কি করেছেন ? সেই হিসাবেই ও সেই ফল ভোগ করতেই তাকে আবার জন্ম নিতে হবে। ( আমরা তো মোটামোটি সবাই জানি যে আমাদের মৃত্যুর পর হিসেব দিতে হয়। যে যেইরকম কর্ম করে সে সেইরকম কর্মফল ভোগ করার জন্যে আবার জন্ম নেয়। আর এই জন্যেই জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে কৃষ্ণ নাম বা হরি নাম কীর্তন করা খুবই আবশ্যক )। আর কটাল ছিলো একজন পাপী মানুষ, তার জীবনে পাপ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। সুতরাং তার কর্মফল ভালো হবে না। এটাই বিধির বিধান। আসুন তাহলে এবার জেনে নেই কটাল ও যমরাজের মধ্যে কি কথোপকথন হয়েছিল।
যমরাজ : চিত্রগুপ্ত দেখোত এই কটাল নামে মানুষটার কর্ম কিরকম ? আমাকে বলোত একটু।
চিত্রগুপ্ত : এই মানুষটি সারাজীবন যে কর্ম করেছে তাতে তো শুধু লাল কালি রয়েছে। সবশেষে তিনি দেখতে পেলেন সেই মানুষটির কর্মে কিছু নীল কালিও রয়েছে।
যমরাজ : কটাল তোমার জীবনে তো তুমি মানুষের উপর শুধু পাপ, অন্যায় আর অত্যাচার করেছো। একটি কাজ শুধু ভালো করেছো। তাই তোমার নরকে জন্ম হবে আর একবার মাত্র মানব কুলে জন্ম হবে। তাহলে তুমি আমাকে বলো, তুমি আগে কোনটি চাও ? নরকে আগে যেতে চাও নাকি মানব কুলে আগে জন্ম নিতে চাও ?
কটাল : প্রভু আমি জানি যে, আমি সারাজীবন শুধু পাপ আর অন্যায় করেছি, যার জন্যে আমার নরকে বাস হবে। কিন্তু আমি এমন কি করলাম যার জন্যে আমি একটা মানব জনম পাবো।
যমরাজ : ওরে কটাল তুমি সারাজীবন ধরে পাপ করতে করতে একটা ভালো কাজ করেছো। আর সেটা হলো তুমি তোমার গৃহে এক Gurudev কে বা বলতে পারো কোনো এক বৈষ্ণবকে আশ্রয় দিয়েছিলে। আর এই পুণ্যের কাজটি করার জন্যেই তুমি একটি মানব জনম পাবে।
কটাল : কিন্তু আমি তো তাকে শুতেও দেয়নি আর কোনোকিছু খেতেও দেয়নি। তাতেই আমি এতো ভালো ফল পাবো ?
যমরাজ : হ্যা সেই Gurudev কে আশ্রয় দেওয়াতেই তুমি মানব জনম পাবে। আর এটাই তোমার জীবনের সবথেকে পুণ্যের কাজ।
কটাল : প্রভু, আমি সব বুজতে পেরেছি। আমাকে প্রথমে মানব জনম দেন। আর তার সাথে আমি আপনার কাছে কিছু আবদার রাখতে চাই। আর সেটা হলো মানব জনম পেয়ে আমি যেন শুধু Gurudev বা বৈষ্ণব সেবা করি। আমার মন যেন আর পাপ কাজ না করে। এবং আমার মন যেন আত্মজ্ঞানে ভোরে যায়
যমরাজ : তথাস্তু। ( কারন কেও যদি Gurudev সেবা বা বৈষ্ণব সেবা দিতে চায় তাহলে তাকে সবাই সুযোগ করে দেয়। কেউই বাধা দেয় না।
বৈষ্ণব সেবার মহাত্ম :
এবার দেখুন, কটালের জন্ম হলো। জন্মের পর তিনি একের পর এক বৈষ্ণব বা Gurudev সেবা দিতে দিতে তার সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে যায়। তারপর এমন একটি সময় আসে যে কটাল বৈষ্ণব সেবা দিতে দিতে তার সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে পুণ্য সঞ্চয় হতে থাকে। অবশেষে তার মৃত্যুর পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দূত তাকে সসম্মানে রথে করে ভগবানের ধামে নিয়ে যান। তার কাছে আর যমরাজ আসতে পারে না।
উপসংহার :
আশা করি আপনারা বুজতে পেরেছেন যে Gurudev বা বৈষ্ণব সেবা করলে কি লাভ হয়। তাই তো বলি এই জরজগতের মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে ও জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি পেতে হরিনাম সংকীর্তন করুন। গুরু ধরুন, তাকে হৃদয়ে বেঁধে রাখুন, তার উপরে ভরসা রাখুন। আর মনে চেতন গুরুকে জাগ্রত করুন। চেতন গুরু জাগ্রত হলে উনিই আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে যাবে। ( হরে কৃষ্ণ )।
- সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গ হলো সাধু সঙ্গ।
- সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র হলো কৃষ্ণ মন্ত্র।
- সর্বশ্রেষ্ঠ সেবা হলো বৈষ্ণব সেবা।
FAQ :
Gurudev কে বা গুরু কে ?
গু মানে অন্ধকার আর রু মানে আলো। অর্থাৎ যারা আমাদের এই দেহকে শুদ্ধ করে আমাদের মনটাকে অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে নিয়ে যায় তাদেরকেই গুরু বা Gurudev বলে।
বৈষ্ণব সেবা দিলে কি হয় ?
বৈষ্ণব সেবা দিলে সমস্ত পাপ ক্ষয় হয়ে পুণ্য সঞ্চয় হয় এবং পরে ভগবানের ধামে তার স্থান হয়।
বৈষ্ণব কারা ?
একটি কথা মনে রাখবেন Gurudev বা বৈষ্ণবরা কিন্তু কোন সাধারন মানুষ নয়। তারা হলেন শ্রীহরি বিষ্ণুর আবেশ অবতার। তাই বৈষ্ণব নিন্দা কখনোই করতে হয় না। আর বৈষ্ণবদের সাথে অপরাধ করলে ভগবান তা সহ্য করেন না।