Breaking Ticker

Karna কে শ্রেষ্ঠ দানবীর বলা হয় কেন ?

প্রিয় সনাতনী ভক্তগন, আজকে আমরা খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাপারে জানতে চলেছি। আর সেই বিষয়টি হলো  দাতা কর্ণ। আজকের পোস্টটিতে আমরা জানবো যে, Karna কে শ্রেষ্ঠ দানবীর বলা হয় কেন ? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি যে আপনারা পোস্টটি সম্পূর্ন পড়বেন। আর তার সাথে এও কথা দিচ্ছি যে karna এর এই পোস্টটি আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে।


পোস্টটিতে থাকছে :

কেন অর্জুন থেকে karna শ্রেষ্ঠ ?

দেবরাজ ইন্দ্রকে কর্ণের কবজ কুন্ডলি দান।

কর্ণের বিশাল পরীক্ষা।

পদ্মার মায়া ও মোহ।

কিভাবে সারা বিশ্বে karna দাতা কর্ণ হলেন ?


Karna কে শ্রেষ্ঠ দানবীর বলা হয় কেন ?
Karna কে শ্রেষ্ঠ দানবীর বলা হয় কেন ?


কেন অর্জুন থেকে karna শ্রেষ্ঠ :

একবার অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে হে মাধব, আপনার কাছে কে শ্রেষ্ঠ karna নাকি আমি ? এই কথাটি পরীক্ষা করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি করলেন শুনুন। একবার শ্রীকৃষ্ণ তার মায়া দিয়ে একটি পর্বত কে সোনায় রূপান্তরিত করে ফেললেন। তারপর তিনি অর্জুনকে বললেন হে পার্থ, এই পর্বতের সমস্ত সোনা এই গ্রামবাসীদের বিলিয়ে দিতে হবে। আর এই কাজটি তোমাকেই করতে হবে। এই কাজটি করার জন্য অর্জুন কি করেছিল জানেন ? তিনি সকল গ্রামবাসীদের সেই পর্বতের সামনে ডেকে এনে নিজের হাত দিয়ে সোনা বের করে গ্রামবাসীদের বিলি করতে লাগলেন। এইভাবে সোনা বিলি করতে করতে  কিছুক্ষণ পরে অর্জুন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ক্লান্ত অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে বলে বিশ্রাম করতে চায়। এর ফলের দান কর্ম বন্ধ হয়ে যায়।


sri krishna, arjun কে বললেন তুমি হয়তো গ্রামবাসীদের কাছ থেকে প্রশংসা পাবার জন্য নিজের হাত দিয়ে তাদের সোনা বিলি করছিলে। ফলস্বরূপ তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছ। এবং তোমার দান কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। এবার তুমি দেখো  যে karna এই কাজটি কিভাবে করে। আশা করি তুমি তোমার উত্তর পেয়ে যাবে।


এরপর ভগবান sri krishna সেই একই কাজ karna কে করতে বললেন। এবার শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে কর্ণ যেটা করল শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। কর্ণ আবার সকল গ্রামবাসীদের সেই পর্বতের সামনে ডেকে  বললেন প্রিয় গ্রামবাসী, এখন এই মুহূর্ত থেকেই এই পর্বতের সমস্ত সোনা আপনাদের। আপনারা নিজ নিজ প্রয়োজন অনুসারে এখান থেকে সোনা নিয়ে যাবেন। এই বলে karna সেখান থেকে চলে গেলেন। তারপর গ্রামবাসীরা নিজেরাই সেই পর্ব থেকে সোনা নিয়ে যেতে লাগলেন। আশা করছি, এই কাজের মাধ্যমে আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি যে, arjun থেকে karna ই শ্রেষ্ঠ।


দেবরাজ ইন্দ্রকে কর্ণের কবজ কুন্ডলি দান :

karna হলেন সূর্যদেবের ছেলে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তিনি ছিলেন পৌরদের পক্ষে এবং পান্ডবদের বিপক্ষে। তিনি কিন্তু কবজ কুণ্ডলী নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কাগজ কুণ্ডলীর মাহাত্ম্য হল যে, তার শরীরে যতক্ষণ এই কবজ কুণ্ডলী থাকবে  ততক্ষণ তাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। অন্যদিকে arjun ছিলেন indradev এর ছেলে। এবং তিনি ছিলেন পান্ডবদের পক্ষে এবং কৌরবদের বিপক্ষে। নিজের পুত্র arjun কে রক্ষা করার জন্যে একবার indradev ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে কর্ণের কাছে আসেন। এসে তিনি কর্ণের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। karna জানতে চাইলে indradev কর্ণকে আগে প্রতিজ্ঞা করতে বলেন যে, তিনি যাই চাইবেন কর্ণকে তাই দিতে হবে। কোন কিছু না ভেবে কর্ণ প্রতিজ্ঞা করে ফেললেন এবং সেই ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে আসা indradev কে বললেন এবার বলুন আপনার কি চাই ? তখন ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে আসা indradev বললেন আমি তোমার দেহের ওই কবজ কুণ্ডলী চাই। কর্ণ তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী দেহ থেকে তার কবজ কুন্ডলী খুলে ছদ্মবেশে আসা ইন্দ্রদেবকে দান করে দেন। তার এই মহান দানে খুশি হয়ে ইন্দ্র দেব নিজের রূপে কর্ণের সামনে প্রকট হয়ে তাকে একটি বিধ্বংসী অস্ত্র প্রদান করেন এবং বলেন এই অস্ত্র তুমি যার নামে ছাড়বে তার মৃত্যু অবশ্যই হবে। ইন্দ্রদেব আরোও কর্ণকে বলেন এই অস্ত্র তুমি  শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করতে পারবে। এবং তারপর এই অস্ত্র পুনরায় আমার কাছে ফিরে আসবে। এই বলে ইন্দ্রদেব সেখান থেকে চলে যান।


আরও পড়ুন :-

মহাভারতের কিছু অজানা তথ্য।

কর্ণের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল ?


কর্ণের বিশাল পরীক্ষা :

একবার ভগবান sri krishna নিজেই কর্ণকে পরীক্ষা করেন। কেন পরীক্ষা নিয়েছিল জানেন ? সবাই কর্ণকে দাতা কর্ণ বলতে লেগেছিলেন। তাই আমাদের প্রান গোবিন্দ বলেন, দেখিতো কর্ণ কিরকম দাতা হয়েছে ? ভগবান শ্রীকৃষ্ণ karna কে পরীক্ষা করার জন্যে তার দুয়ারে এসে উপস্থিত হলেন। তাও আবার এক বৈষ্ণবের ছদ্মবেশে। প্রাণ গোবিন্দ শ্রীকৃষ্ণ বৈষ্ণবের ছদ্মবেশে এসে কর্ণকে ডাকতে শুরু করলেন। কর্ম বেরিয়ে এলে তিনি কর্ণকে বললেন, আজকে আমি তোমাদের ঘরে শিশু সেবা করতে চাই। তুমি কি আমাকে সেবা করাবে।তবে যেমন তেমন শিশু নয়। আমি তোমাদের একমাত্র পুত্র বৃশকে সেবা করতে চাই। তবে নিজের হাতে বৃশকে কেটে রান্না করতে হবে। কিন্তু একটি কথা মনে রাখবে চোখের জল ফেলা যাবে না।তুমি কি আমাকে সেবা করাতে পারবে ?

এই কথা শুনে কর্ণ আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, বৈষ্ণব যদি ফিরে যায় তাহলে অধর্ম হবে। এই কথা চিন্তা করে তিনি বৈষ্ণব কে বললেন আপনি একটু অপেক্ষা করেন, আমি আমার স্ত্রী পদ্মার থেকে অনুমতি নিয়ে আসি। karna তার স্ত্রী পদ্মার থেকে অনুমতি নিতে গেলেন। কাঁদতে কাঁদতে পদ্মা বললেন স্বামী, তোমার ধর্মই যে আমার ধর্ম এবং তোমার অধর্মই যে আমার অধর্ম। এতদিন তুমি কাউকে ফেরত পাঠাও নি। সুতরাং আজ ফেরত পাঠিয়ে তুমি বৈষ্ণব অপরাধে অপরাধী হয়োনা।

আর অন্যদিকে বৃশ বলে পিতা! এই সংসারে কজনের দেহ বৈষ্ণব সেবায় লাগে? আমি যে বড়ো ভাগ্যবান গো পিতা। তুমি কেঁদে সময় নষ্ট কোরো না পিতা। বাইরে বৈষ্ণব যে অপেক্ষা করছে। তারপর karna নিজের স্ত্রী ও পুত্রের অনুমতি নিয়ে কর্ণ ও পদ্মা নিজের হাতে তাদের পুত্র বৃশকে কেটে রান্না করেছিল সেই বৈষ্ণবের জন্যে। অন্যদিকে বৈষ্ণবের ছদ্মবেশে থাকা  প্রাণ গোবিন্দ, দেখছেন আর জগৎকে বলছেন, হে জগৎ দেখো যদি দাতা হতেই হয় তবে কর্ণের মতো হও। এই সংসারে কর্ণই হলো শ্রেষ্ঠ দাতা।

পদ্মার মায়া ও মোহ :

কর্ণের স্ত্রী পদ্মা তার পুত্রের মাথাটি রেখে দিয়েছিলো। প্রাণভরে কাঁদবে বলে। কিন্তু ভগবানকে ষোলো আনা না দিলে তো ভগবান তাকে কৃপা করেন না। কথাই রয়েছে "যে করে আমার আশ, তার করি আমি সর্বনাশ। তবু যদি না ছাড়ে আমার পাশ, তাহলেই তো হয় আমি তার দাশের দাশ"। ঐদিকে ভগবান তো সবই জানেন যে পদ্মা বৃশোর মুন্ডটি লুকিয়ে রেখেছে।

karna এবং তার স্ত্রী পদ্মা সবকিছু তৈরী করে তাদের বাড়িতে আসা ছদ্দবেশী  বৈষ্ণবকে সেবা করার জন্যে বলেন। কিন্তু ছদ্দবেশী বৈষ্ণব মানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন তোমাদের পুত্রের মুন্ডটি যে তোমরা লুকিয়ে রেখেছো সেটা দিয়ে এক্ষুনি আমার জন্যে অম্ল রান্না করে নিয়ে আসো। নাহলে আমি সেবা নিবো না। অতঃপর পদ্মা তার পুত্রের মুন্ডটি দিয়ে অম্ল রান্না করে নিয়ে এসেছিলো। এইরকম দানি ছিল karna রা। কিন্তু তারা দানির সাথে সাথে গোবিন্দ ভক্তও ছিলেন। আমি আপনাদের বলি কজনে পারে এইরকম ত্যাগ করতে ?

কিভাবে সারা বিশ্বে karna দাতা কর্ণ হলেন :

অবশেষে প্রান গোবিন্দ karna কে ও পদ্মাকে তাদের পুত্র বৃশকে ফিরিয়ে দেন। এবং উপর থেকে দৈববানী করেন যে, তুমি তোমার পরীক্ষায় সফল হয়েছো। আজ সত্যিই তুমি প্রমান করে দিয়েছো যে, এই সংসারে যদি কেও দাতা হয়ে থাকে তবে সেটা একমাত্র তুমি। আজ তোমার দাতা কর্ণ নামটি সার্থক হয়েছে।

কর্ণ বলেন প্রভু তুমি যখন এলে তখন ধরা কেন দিলে না। তুমি ধরা দেও প্রভু। আমরা আমাদের পুত্র বৃশোকে যে তোমার চরণে সমর্পিত করতে চাই। অতঃপর ভগবান আসলেন এবং karna ও পদ্মা তাদের পুত্র বৃশোকে ভগবানের চরণে সমর্পিত করেন। আর অন্যদিকে ভক্ত আর ভগবানের মধুর মিলন হচ্ছে।

উপসংহার :

আশা করি আপনারা বুজতে পেরে গেছেন, যে karna কে কেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানবীর বলা হয়। নিজের পুত্রকে যারা বলে দিতে পারেন তাদের মতো দানবীর আর অন্য কেউ হয় নাকি ? দাতা কর্ণের সম্পর্কে যদি আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আমাকে অনেক বেশি করে কমেন্ট করবেন আমি তা নিয়ে আপনাদের জন্যে দাতা কর্ণের একটি পোস্ট অবশ্যই লিখবো। পোস্টটি কেমন লাগলো আমাকে অবশ্যই জানাবেন।

।। জয় রাধে রাধে কৃষ্ণ কৃষ্ণ
গোবিন্দ গোবিন্দ বলো রে।।

FAQ :

দান করলে কার লাভ হয় ?
দান করলে দানির লাভ হয়। দান গ্রহনকারীর নয়।
Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.