Sanatan sikkha তে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানিয়ে আমি আজকের পোস্টটি শুরু করছি। আজকের পোস্টে আপনারা জয়া বা ভৈমী Ekadashi ও তার মাহাত্মর কথা জানতে পারবেন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। এই একাদশীর কথা জেনে আপনারাও জয়া বা ভৈমী Ekadashi পালন করতে চাইবেন।
jaya ba voimi ekadashi |
আগেও আমি Ekadashi সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সেই পোস্টটিতে আপনারা দেখতে পারবেন যে Ekadashi কেন পালন করতে হয়, যারা একাহারে বা নীরাহারে থাকতে পারেন না তারা কিভাবে একাদশী পালন করবেন ? একাদশীতে কি কি সেবা করতে পারবেন আর কি কি সেবা করা যাবে না ? একাদশীর দিন কি কি করা যাবে আর কি কি করা যাবে না এই সমস্ত কিছু আমি সেই পোস্টটিতে আলোচনা করেছি। আপনারা যদি পোস্টটি না দেখে থাকেন তাহলে এখানে ক্লিক করে পোস্টটি দেখতে পারেন। তাহলে চলুন আজকের পোস্টটি শুরু করি।
জয়া বা ভৈমী Ekadashi কি :
মাঘী পূর্ণিমায় যে Ekadashi পালন করা হয় তাকে জয়া একাদশী বলে। গরুড় পুরাণ অনুযায়ী এই একাদশীর নাম ভৈমী একাদশী। পুরাণে মহারাজ যুধিষ্ঠির ও শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে এই একাদশীর মাহাত্মর কথা লেখা আছে। চলুন তাহলে জেনে নেই।
জয়া বা ভৈমী একাদশীর মাহাত্ম :
মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণের কাছে জয়া বা ভৈমী Ekadashi র কথা জানতে চেয়েছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ মহারাজ যুধিষ্ঠির কে বলেছিলেন মাঘী পূর্ণিমার এই তিথিটি হলো সর্বপাপনাশিনী, পবিত্রা, সর্বশ্রেষ্ঠা ও মুক্তি প্রদয়িনী। এই একাদশী ব্রোত পালনের ফলে মানুষের কখনো প্রেতত্ত্ব প্রাপ্তি হয় না। শোন তবে জয়া বা ভৈমী একাদশীর মাহাত্মর কথা।
দেবরাজ ইন্দ্রের ইচ্ছা :
এই কথাটি হলো সেই সময়ের কথা যখন স্বর্গে দেবরাজ ইন্দ্র রাজত্ব করছিলেন । তার সঙ্গে অন্যান্য দেবতারাও বেশ সুখেই ছিল। তখন দেবতারা পরিজাত পুষ্প শোভিত নন্দনকাননে অপ্সরাদের সঙ্গে বিহার করতেন। একদিন দেবরাজ ইন্দ্রের ইচ্ছায় স্বর্গে পঞ্চাশ কোটি অপ্সরা ও নায়ক নৃত্য করতে লাগলেন। সঙ্গে ছিল গন্ধর্বগন। তারাও অপ্সরা ও নায়কদের নৃত্যে গান গাইতে লাগলেন। পুষ্প দত্ত, চিত্র সেন প্রভৃতি প্রধান প্রধান গন্ধর্বরাও সেই নৃত্য সভায় উপস্থিত ছিলেন।
পুষ্পবন্তী ও মাল্যবান :
চিত্র সেনের পত্নীর নাম ছিল মালিনী। এবং পুষ্পবন্তী ছিল তাদের এক কন্যা। অন্যদিকে পুষ্প দত্তের পুত্র ছিল মাল্যবান। তারা দুজনেও সেই নৃত্য সভায় উপস্থিত ছিল। মাল্যবান মুগ্ধ হয়েছিল পুষ্পবন্তীর রূপে। পুষ্পবন্তীও কটাক্ষ দ্বারা মাল্যবানকে বশীভূত করেছিল। কিন্তু একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট থাকায় তাদের দুজনের মন বিভ্রান্ত হয়েছিল। নৃত্য করার পরিবর্তে সেখানে তারা দৃষ্টিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল। তারা দুজনেই দুজনের প্রতি কামাসক্ত হয়েছিল। ফলে সভায় নৃত্য অনুষ্ঠানে লঙ্ঘন ঘটে।
দেবরাজ ইন্দ্রের অভিশাপ :
এই পুরো ব্যাপারটা দেবরাজ ইন্দ্র বুঝতে পারে। তিনি ক্রোধে পুষ্পবন্থী ও মাল্যবান কে অভিশাপ দেন যে হে মূঢ়, তোমরা আমার আজ্ঞা পালন করনি। তোমাদের ধিক্কার। আমি তোমাদের দুজনকে অভিশাপ দিচ্ছি তোমরা এক্ষনি পিশাচ যোনি প্রাপ্ত করবে এবং মর্তলোকে গিয়ে তোমাদের এই দুস্কর্মের শাস্তি ভোগ করবে।
জয়া বা ভৈমী Ekadashi ব্রোত পালন :
দেবরাজ ইন্দ্রের অভিশাপে পুষ্পবন্তী এবং মূল্যবান দুজনেই দুঃখিত হয়ে হিমালয় পর্বতে বিচরণ করল। পিশাচ যোনি প্রাপ্ত হয় তারা খুবই দুঃখিত ছিল। তারা নিজেদের পরিচয় ভুলে গিয়ে প্রচন্ড শীতে হিমালয় পর্বতে দিন কাটাতে লাগলো। একদিন পিশাচ পিশাচী কে বলল আমরা নিশ্চয়ই কোন ভীষণ পাপ করেছি। যার জন্যে আমাদের এই নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। এখন থেকে আমরা আর কোন পাপ করবো না। সেই সময় ছিল জয়া বা ভৈমী Ekadashi র তিথি। সেই সময়ে তারা অশ্বস্থ বৃক্ষের নিচে নিরাহারে এবং নির্জলা অবস্থায় দিন কাটালো। এবং শীতের প্রকোপে অনিদ্রায় রাত্রিও অতিবাহিত করল।
জয়া বা ভৈমী Ekadashi ব্রোত পালনের ফল :
জয়া বা ভৈমী Ekadashi র দিন অনাহারে এবং রাত্রি জাগরনের ফলে তাদের ভক্তের অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়েছিল। এই ব্রত পালনের ফলে ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় তাদের পিশাচত্ব দূর হলো। এবং তারা তাদের পূর্ব রূপ ফিরে পেল এবং তারা পুনরায় স্বর্গে গেল। দেবরাজ ইন্দ্র তাদের দুজনকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের কিভাবে পিশাচত্ব দূর হলো এবং আমার অভিশাপ থেকে তোমাদের মুক্ত করল কে ?
মাল্যবান বললেন, জয়া বা ভৈমী Ekadashi ব্রোত পালনের ফলে এবং ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় আমাদের পিশাচত্ব দূর হয়েছে। দেবরাজ ইন্দ্র পুনরায় মাল্যবান কে বললেন হে মূল্যবান, যারা একাদশী পালন করেন এবং যারা বিষ্ণুভক্তি তথা কৃষ্ণ ভক্তি পরায়ণ তারা আমাদেরও পূজ্য। এখন থেকে তোমরা আবার অমৃত পান করবে। এবং পুষ্পবন্তীকে নিয়ে এখানেই সুখে বাস করবে ।
শ্রীকৃষ্ণ এবং মহারাজ যুধিষ্ঠির :
শ্রীকৃষ্ণ আরোও মহারাজ যুধিষ্ঠির কে বললেন হে মহারাজ এই জয়া বা ভৈমী Ekadashi ব্রোত ব্রহ্মহত্যা জনিত পাপকেও বিনাশ করে। এই ব্রোত পালনে সমস্ত প্রকার দানের ফলও লাভ করা যায়। সকল প্রকার যজ্ঞ ও তীর্থের ফল এই একাদশীর মাধ্যমে লাভ করা যায়। এই জয়া বা ভৈমী Ekadashi ব্রোত পালনের ফলে মহা আনন্দে ও অনন্তকাল পর্যন্ত বৈকন্ঠ ধামে বাস করা যায়।
Ekadashi পালন করায় যদি এইরকম ফল পাওয়া যায় তবে কে না চায় একাদশী ব্রোত পালন করতে ? সবাইতো চায় ভালো থাকতে, আনন্দে থাকতে এবং ভগবানের কৃপা লাভ করতে। তাহলে আর দেরি না করে কোন কিছু না ভেবে একাদশী ব্রোত পালন করা শুরু করে দিতে পারেন। এবং অন্য কেউ একাদশী ব্রোত পালন করাতে সাহায্য করবেন।
jaya ba voimi ekadashi |
ভগবানের নির্দেশ :
চৈতন্য মহাপ্রভু যিনি নিজেই স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিনি সদবা, বিধবা, মহিলা, পুরুষ সবাইকে Ekadashi পালন করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। ভাই আপনি নিজে এই জয়া বা ভৈমী Ekadashi ব্রোত পালন করুন এবং অন্য কেউ এই ব্রত পালন করতে সাহায্য করুন।
Ekadashi ব্রোত পালনের উদ্দেশ্য :
Ekadashi ব্রোত মানে শুধু উপবাস থাকা নয়।শুদ্ধ ও পবিত্র দেহ-মন নিয়ে একাদশী ব্রোত উপবাস রেখে নিরন্তর ভগবানের নাম জপ, হরিনাম শ্রবন, কীর্তন, গীতা পাঠ করে ভগবানকে খুশি করানোর চেষ্টা করানোই হলো একাদশী ব্রোত পালনের মূল উদ্দেশ্য।
জয়া বা ভৈমী Ekadashi ২০২৪ এর সময়সূচি :
২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ মঙ্গলবার হলো জয়া বা ভৈমী Ekadashi র দিন। এবং পরের দিন পূর্বাহ্ন ৯।৫৮ এর মধ্যে পারণ।
jaya ba voimi ekadashi |
উপসংহার :
আজকের পোস্টে জয়া বা ভৈমী Ekadashi র ব্যাপারে আমি মোটামোটি একটা আলোচনা করেছি। জয়া বা ভৈমী Ekadashi র কথা জেনে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। না জানালে কি করে বুজবো যে পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগলো কি লাগলো না।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।।
হরে রাম হরে রাম,
রাম রাম হরে হরে"।।
FAQ :
২০২৪ এর ভৈমী একাদশী কবে ?
২০ শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ মঙ্গলবার হলো জয়া বা ভৈমী Ekadashi র দিন।