SARASWATI PUJA : সনাতন শিক্ষার পক্ষ থেকে সকলকে জানাই saraswati puja র আন্তরিক প্রীতি, শুভেচ্ছা, ও অভিনন্দন। আজকের পোস্টে আমি saraswati puja র সম্পর্কে অনেকগুলি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। সঙ্গে থাকবে saraswati puja 2024 এর তারিখ ও সময়সূচি। মা যেন সবাইকে বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে সবার মনোকামনা পূর্ণ করে। মায়ের কাছে এই প্রার্থনা করে sanatan sikkha।
Saraswati Puja |
মা সরস্বতী হলেন বেদের মাতা। বেদে তিনি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। ধ্যান অনুসারে তিনি কখনো দ্বীভূজা আবার কখনো চতুর্ভূজা। দ্বিভুজা রূপে তিনি বীণা ও পুস্তক ধারন করেন। এবং চতুর্ভুজা রূপে তিনি বীণা, বাঁদিনী, অক্ষমালা, ও পুস্তক ধারন করে থাকেন। তিনি সকল প্রকার বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তার বাহন রাজহংস হলেও ধ্যানের পার্থক্যে কখনো কখনো ময়ূরও দেখা যায়। মা সরস্বতীর গায়ের রং শুভ্র তুষারের মতো এবং তারা আসন শ্বেত পদ্ম। মা সরস্বতী তার হাতে বীণা পুস্তক অক্ষমালা ধারন করে থাকেন। মা সরস্বতীর আদিরূপ হল মহাসরস্বতী। যিনি সৃষ্টির আদিতেই সৃষ্টি হয়েছিলেন।
সরস্বতী পূজা / saraswati puja :
'সরস' শব্দের অর্থ হলো জল। সুতরাং সরস্বতী শব্দের অর্থ হলো জনবতী বা নদী। অনেক পণ্ডিতরাই মনে করেন দেবী সরস্বতী প্রথমে ছিল নদী। পরে তিনি দেবী হিসেবে পূজিত হন। তিনি চেতনা ও জ্ঞানের দেবী। বাংলায় মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় saraswati puja। এই পূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ন পূজা। মা সরস্বতী সকল প্রকার বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী। যেমন : জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৃত্য, শাস্ত্র, অঙ্কন ইত্যাদি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যা প্রাপ্তির আশায় এই দেবীর পূজা করে থাকে। মাতা সরস্বতী শ্বেত বস্ত্র পরিধান করে থাকেন, যা পবিত্রতার নিদর্শন। পুরোহিত পূজা শুরু করার আগ পর্যন্ত মাতার মুখমণ্ডল ঢাকা থাকে। তার আসন পুষ্প দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়। মাতা সরস্বতী অত্যাবশকীয় অর্ঘ্য হলো ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তক এবং পলাশ ফুল। যেটা ছাড়া অঞ্জলি অসম্পূর্ন থেকে যায়। মা সরস্বতীর কৃপায় সমস্ত সংসার জ্ঞানের ছোঁয়া পেয়ে ভরে উঠুক এই প্রার্থনা করে সনাতন শিক্ষা।
সরস্বতী পূজার নিয়ম ও পদ্ধতি :
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী পূজা খুবই আনন্দের সহিত করে থাকে। saraswati puja র দিন ভোরে পরিবারের সকল সদস্যদের স্নান করে, ধোয়া বস্ত্র পরিধান করে পূজা সম্পূর্ন করা উচিত। পুরোহিত পূজা করার আগ পর্যন্ত মায়ের মুখমন্ডল ঢাকা থাকবে। এবং পুরোহিতই পূজা করার সময় মায়ের মুখমন্ডল খুলবেন। সরস্বতী পূজার আগের দিন নিরামিষ ভোজন করা উচিত। এবং সরস্বতী পূজার দিন উপবাস থেকে সরস্বতী পূজা পালন করা উচিত। আসুন তাহলে এবার জেনে নেই সরস্বতী পূজায় কি কি উপকরনের দরকার হয় ...
উপকরন :
সরস্বতী পূজার জন্য যে সমস্ত উপকরণগুলির দরকার হয় সেগুলি হল : সিঁদুর ২ প্যাকেট, ঘট ১ তা, আম পল্লব ১ টা, নারিকেল ১ টা বোটাসহ, ধূপতি, ধূপ, নারীকেলের ছোবা, চালন, সরঙ্গ ১ প্রপোস্ত, পাখা ১ টা, শাখা ১ জোড়া, আলতা, প্রসাধনী, তিল, আতপ চাল, হরিতকি, পান সুপারি, ঘি, মধু, দুধ, দই, চিনি, বাতাসা, কদমা, তিলা, সন্দেশ, ফল মুল পরিমানমতো, কবরি কলার ফানা, গামছা ১ টা, শাড়ি ১ টা, সিঁদুর ১ কৌটা, ইকরা ১ টা, পঞ্চশষ্য, সাদা চন্দন, লাল চন্দন, খাতা ও কলম, কর্পূর, মোমবাতি, ধূপশলাকা, দয়াত, কলম, চিড়া, খৈ, নাড়ু, মোয়া, ভোগের দ্রব্য, পঞ্চ আবির, দুর্বা, ফুল, বেলপাতা, ধান, হোমের জন্যে বালু ও পাঠকাঠি, হোমের জন্যে ৮ প্রকারের খড়ি যথা : আম খড়ি, যজ্ঞ ডুমুর, দেবদারু, পদ্ম, অসত্ব, পলাশ, বেল ও বট ইত্যাদি।
প্রনাম মন্ত্র :
ওঁম সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যাঙ্গদেহি নমোহস্ততে।।
ওঁম জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্ততে।।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র ৩ বার :
ওঁম জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীণারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্ততে।।
ওঁম ভদ্রকাল্যই নিত্যঙ সরস্বত্যই নমো নমঃ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যা স্থানেভ্য এব চ স্বাহা।
এসো স চন্দনো পুষ্পবিল্ব পত্রাঞ্জলি সরস্বত্যই দেব্যই নমঃ।।
মা সরস্বতী আমাদেরকে জানিয়ে গেছেন যে জীবনকে শুভ্র ও পবিত্র রাখা উচিত। সত্যকে আঁকড়ে ধরে রাখা উচিত। মুল গ্রন্থের বানী পালন করা উচিত। এতে জীবন স্বাচ্ছন্দে থাকবে এবং ছন্দময় হয়ে উঠবে।
সরস্বতী পূজার তাৎপর্য :
বাংলায় মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতী পূজা। মা সরস্বতীর গায়ের রং শুভ্র তুষারের মত। তার বাহন রাজহংস। তিনি বেদবাদিনী পুস্তক অক্ষমালা ধারন করে থাকেন। এই সমস্ত রহস্যের কথা জেনে এবং তার তাৎপর্যের কথা হৃদয়ে ধারন করে saraswati puja করা উচিত। না হলে যত বড়ো করেই পূজা করা হোক না কেন সেই পূজা বিফলে যাবে। মা সরস্বতী হলেন জ্ঞানদায়িনী বিদ্যার দেবী। আর আমরা হোলাম জ্ঞান পিপাসু। তাই জ্ঞান, বিদ্যা, ন্যায়, আচার, চেতনা পাওয়ার জন্যে আমাদেরকে সরস্বতী পূজা করা উচিত। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এই পূজা করে থাকে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জনের আশায়। পরিবারের গুরুজনদেরও সরস্বতী পূজা করা উচিত যাতে তারা তাদের সন্তানদের সঠিক জ্ঞান, বিদ্যা ও ন্যায়ের শিক্ষা দিতে পারে। ধর্মীয় চেতনা পাওয়ার জন্যে এই পূজা অতি আবশ্যকীয়। কারন মাতা সরস্বতী আমাদেরকে ধর্মীয় চেতনাও প্রদান করে থাকেন। সুতরাং একটি মানুষের মন পবিত্র রাখতে, এবং তার আচার ব্যবহার নির্মল এবং নির্দোষ রাখতে, সর্বদাই ধর্মীয় পথে চলতে সরস্বতী পূজা একটি বিশেষ উৎসব।
Vasant Panchami |
saraswati puja য় সবার কাছে আমার অনুরোধ :
সরস্বতী পূজা সম্পর্কে অনেক কিছু তো জানলাম। এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক যে, saraswati puja য় কি কি করা উচিত এবং কি কি করা উচিত নয় ?
১> সংযম করে শুদ্ধ দেহে এবং পবিত্র মন নিয়ে সরস্বতী পূজার পুষ্পাঞ্জলি দিবেন।
২> অসভ্য ধরনের বেশভূষা দিয়ে প্রতিমা তৈরি করবেন না।
৩> পুজোর কার্ড পোস্টার ব্যানার এবং অন্যান্য সবকিছুতেই সাত্বিকতা বজায় রাখবেন।
saraswati puja 2024 এর তারিখ ও সময়সূচি :
Saraswati puja 2024 |
উপসংহার :
FAQ :
মা সরস্বতী কে ?
যদি কোন হিন্দুকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে মা সরস্বতী কে ? তাহলে হয়তো অনেকে বলবে তিনি বিদ্যার দেবী। আবার হয়তো কয়েকজন বলবে তিনি ব্রহ্মার স্ত্রী। আসলে ঈশ্বর অথবা পরমব্রহ্ম যা কিছুই সৃষ্টি বা রচনা করেন না কেন তা হলো ব্রহ্ম বা ব্রহ্মা। আর দেবী সরস্বতী হল ব্রহ্মার নারী শক্তি। অর্থাৎ তিনি পরমব্রহ্মর রূপের দেবী। আমরা অনেকে হয়তো স্বরসতী দেবীর পূজা ছোট পূজা বলে মনে করি। আসলে কোন দেবদেবীর পূজাই ছোট বা বড় হয় না। সব দেবদেবীরা সমান।
মা সরস্বতীর বাহন রাজহংস কেন ?
কারন দুধ ও জল মিশ্রিত তরল থেকে রাজহংস শুধুমাত্র দুধটুকু কিংবা ক্ষীরটুকু খেয়ে বাকিটা ফেলে দিতে সক্ষম হয় । আর আমাদের এই জগত সংসারে ভালো মন্দ দুটোই আছে। মা সরস্বতী তার বাহন রাজহংসের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, সমাজের ভালো মন্দ কিংবা ধর্ম ও অধর্ম থেকে শুধুমাত্র ভালো কিংবা ধর্মটাকে বেছে নিতে হবে।
মা সরস্বতী দ্বিভুজা না চতুর্ভুজা ?
বর্তমানে মা সরস্বতীকে দুই হাত বিশিষ্ট দেখা গেলেও দেবী সরস্বতী আসলে চতুর্ভূজা। তার এক হাতে বিণা, আরেক হাতে বাদিনী, তৃতীয় হাতে পুস্তক এবং চতুর্থ হাতে অক্ষমালা থাকে।
মা সরস্বতীর গায়ের রং সাদা হয় কেন ?
কারণ সাদা রং হলো পবিত্রতার প্রতীক। তাই আমাদের মন পবিত্র করতে হবে। এবং নিজেদের চরিত্রকে নির্মল করতে হবে। যারা নিজেদের মনকে পবিত্র এবং চরিত্রকে নির্মল রাখার চেষ্টা করবে, মা সরস্বতীর কৃপায় তারা আজীবন পবিত্র মন এবং নির্মল চরিত্রের মালিক হয়ে থাকবে।
মা সরস্বতীর হাতে বীণা থাকে কেন ?
আমরা সবাই কিছু না কিছু প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করি। আর বীণা হচ্ছে শিল্পকলার প্রতীক। যারা নাচ, গান, আবৃতি, নাটক প্রভৃতি শিল্প কলার সাথে জড়িত তারা কখনো মিথ্যা বলেনা, চুরি, ডাকাতি করে না। খুন ও ধর্ষন তো দূরের কথা। আশা করি বোঝাতে পারলাম।
মা সরস্বতীর হাতে পুস্তক থাকে কেন ?
পুস্তক হলো জ্ঞান রসের ভান্ডার। যেহেতু দেবী সরস্বতী হলেন জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সেহেতু তার হাতে পুস্তক থাকে কিংবা তার পূজায় পুস্তক দিতে হয়। আর আমরা হিন্দুরা হলাম জ্ঞানপিপাসু। জ্ঞান এবং বিদ্যা অর্জনের আশায় আমরা মা সরস্বতীর পূজা করে থাকি।
সরস্বতীর আসন রাজহাঁস না পদ্মফুল ?
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মা সরস্বতীর রাজহংসের উপরে বসে আছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তিনি পদ্মফুলের উপরে বসে আছেন। আসলে পদ্ম ফুলের আসনই সঠিক আসন। কারণ পূর্ন প্রস্ফুটিত পদ্মফুল হলো সফল,সমৃদ্ধ ও বিকশিত জীবনের প্রতীক। এখানে ফুলের বিকাশের সাথে জীবনের বিকাশের তুলনা করা হয়েছে। পূর্ণ প্রস্ফুটিত পদ্ম ফুলের উপর মা সরস্বতীর বসে থাকার মানে হল তার আদর্শকে রক্ষা করে এবং লালন পালন করে নিজের জীবনকে বিকশিত করা।আর নিজের জীবনকে বিকশিত করতে পারলে জীবনটাও ফুলের মত সুন্দর পবিত্র এবং সমৃদ্ধ হবে।
সরস্বতী পূজার আগে কুল খাওয়া উচিত নয় কেন ?
কুল হল মা সরস্বতীর অতি পছন্দের একটি ফল। এই ফল দিয়ে পূজো দিলে মা সরস্বতী তুষ্ট হন। তাই সরস্বতী পূজার দিন শুদ্ধ পবিত্র মনে মাকে কোন নিবেদন করে পূজা দেওয়ার পর তবেই আমাদের কুল খাওয়া উচিত।