Breaking Ticker

শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?

প্রিয় সনাতনী ভক্তরা, আপনাদের প্রিয় সাইট Sanatan sikkha তে আপনাদেরকে স্বাগত জানাই। আজকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি, শিব কে এবং কিভাবে শিব পূজা করতে হয় ? এই বিষয় টি। Shiv অর্থাৎ মহাদেব। তিনি সকল দেবের দেব। তাই তিনি মহাদেব। তিনি শক্তিধর অথচ অল্পতেই তুষ্ট হন। তার মাথায় ফুল, বেলপাতা ও জল দিয়ে কেউ পুজো দিলেই তিনি তাকে প্রতিদান দেন। তাহলে ভাবুন, শিব যদি এমন হয় তাহলে Shiv puja দিতে কে না চায় ?


শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?
শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?

Shiv কে সন্তুষ্ট করা খুবই সহজ। তার মাথায় ফুল, জল ও বেলপাতা দিয়ে পূজা দিলেই তিনি তিনি তুষ্ট হন। তাই Shiv puja করা খুবই সহজ । ছোট থেকে বড়ো, ছেলে মেয়ে এমন কি পুরুষ মহিলা সবাই শিব পূজা করে। আজকের পোস্টটি পড়ে আমরা জেনে নেব যে, কিভাবে সহজ পদ্ধতিতে শিব পূজা করতে হয় ? তাহলে চলুন শুরু করি ...


শিব কে // Shiv ke :

Shiv হলেন সকল দেবতার দেব অর্থাৎ মহাদেব। তিনি মহাশক্তিধর। আবার শিব হচ্ছেন তমোগুনের দেবতা। বৈষ্ণবদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব। Shiv হচ্ছেন সবার গুরু। তার কাছে কৃষ্ণ প্রেম, ভক্তি, আধ্যাত্মিক জ্ঞান পাওয়া যায়, যা এই জগতের সব থেকে বড়ো আশীর্বাদ। কিন্তু সাধারন মানুষ শিবের কাছে এই সমস্ত কিছুই চায় না। কেউ চায় টাকা তো কেউ চায় চাকরি আবার কেউ চায় গাড়ি তো কেউ চায় বাড়ি। কিছু কিছু মেয়ে শিবের মতো স্বামী চেয়ে থাকেন এবং কিছু কিছু ছেলে মা পার্বতীর মতো স্ত্রী চেয়ে থাকেন। কিন্তু দিব্য জ্ঞান কেউ চায় না। মহাদেব বলেছিলেন কৃষ্ণ ভক্ত আমার কাছে খুব প্রিয়। যারা আমার পূজা করে, আমার ধ্যান ও তপস্যা করে তাদের থেকে কৃষ্ণ ভক্তদের বেশি ভালোবাসি।


শিব সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য // Shiv somporke ajana kichu tottho :

চলুন এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক শিবের কিছু অজানা তথ্য সম্পর্কে। যা হয়তো অনেকে আমরা জানিনা।


ত্রিনয়ন // Trinayan :

আমরা শিবের ত্রিনয়ন সবসময় দেখতে পাই। কিন্তু কেন থাকে এই ত্রিনয়ন, কখনো ভেবে দেখেছেন কি ? আসলে আমরা আমাদের চোখ দিয়ে যা কিছুই দেখি তা সবই হলো অনিত্য এবং ভ্রমমাত্র। যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়েই চলেছে। আর ত্রিনয়ন হলো অন্তদৃষ্টির প্রতীক। আর অন্ত দৃষ্টি দিয়ে আমরা নিত্য সত্যকে জানতে পারি এবং ভগবানের সন্ধান লাভ করতে পারি। ত্রিনয়ন দ্বারা Shiv আমাদের এই সংকেতটিই দিয়েছেন।


সর্প // Sarpa :

সর্প হলো জাগ্রততার প্রতীক। Shiv তার গলার সর্প দ্বারা আমাদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন যে আমাদের হৃদয়টাকে আমরা যেন সবসময় ধর্ম এবং জ্ঞান দ্বারা আবৃত করে রাখি। আমরা যেন কখনোই কুপথে বা ধ্বংসের পথে না যাই। মহাদেব তার গলার সর্প দ্বারা আমাদের এই উপদেশটি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।


চন্দ্র // Chandra :

চন্দ্র হলো সুন্দরতা এবং স্নিগ্ধতার প্রতীক। Shiv তার জটায় চন্দ্রকে ধারন করে রেখেছেন। তিনি চন্দ্রের মাধ্যমে আমাদের জানাতে চেয়েছেন যে আমাদের মনটাকেও সুন্দর এবং স্নিগ্ধতাপূর্ন করতে হবে। কারন মন দিয়েই তো আমরা সাধন ভজন করি। আর যদি মন পবিত্র থাকে তাহলে ফল লাভ হবে।


ভষ্ম // Vasmo :

এটা সত্যি যে আমাদের জীবন একদিন না একদিন ভষ্মতে পরিনত হবে। আর এই জগতের সমস্ত মোহ ও মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। আজ আমরা যে জিনিস নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত থাকি আগামীকাল তা কোন কাজেই লাগবে না। সবকিছু ভষ্ম হয়ে যাবে। বেঁচে থাকবে শুধু মানুষের ব্যবহার এবং কর্ম। তাই জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে সৎ ব্যবহার এবং সৎকর্ম করা উচিত।


ত্রিশূল // Trishul :

ত্রিশূল অর্থাৎ প্রকৃতির তিনগুন। Shiv ঠাকুরের হাতে ত্রিশূল অর্থাৎ প্রকৃতির তিনগুন শিবের নিয়ন্ত্রনে থাকে। যথা : সতগুন, রজগুন ও তমোগুন। আমরা সবাই এই তিনগুনের অধীনে থাকি। এই তিনগুন থেকে সত্যগুন এবং সত্যগুন থেকে যেন আমরা ভগবানের পথে অগ্রসর হয়ে ভগবানকে লাভ করতে পারি।


গঙ্গা // Ganga :

মহাদেবের মাথায় গঙ্গা রয়েছে গঙ্গা। গঙ্গা অর্থাৎ পবিত্র জ্ঞান। শিবের হৃদয়ের মতো যদি আমরা আমাদের হৃদয়কে স্থির করতে পারি তাহলে আমাদের ভিতরে পবিত্র জ্ঞান প্রবাহিত হবে। এতে আমরা আমাদের জীবনকে সার্থক করে তুলতে পারবো।


ডমরু // Damru :

ডমরু হলো অসীম চেতনার প্রতীক। জ্ঞান হলো অসীম। অর্থাৎ জ্ঞানের কোন সীমা নেই। আর এই অসীম জ্ঞান চেতনাকে লাভ করার জন্যে অসীম যাত্রায় আমাদেরকে সমর্পন করতে হবে।


নীল শরীর // Nil shorir :

আকাশ যেমন অন্তহীন, Shiv ও এমন অন্তহীন। অর্থাৎ শিবের নীল শরীর আকাশের মতই অন্তহীনতা অর্থাৎ অসীমতার প্রতীক। শিবকে জানতে হলে আমাদের অসীমতাকে জানতে হবে যার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কোটি কোটি রহস্য। আর আমাদের এই রহস্য গুলি জানার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।


শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?
শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?hiv ? 

শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা // Shiv puja korar koekti mullyoban katha :

এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক যে কিভাবে শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা সম্পর্কে (Some valuable words to do shiv puja)। সবার আগে পূজার উপকরনগুলো সংগ্রহ করে নিবেন।


কিছু কিছু উপকরন রয়েছে যেগুলি ছাড়া Shiv puja সম্পূর্ন হয় না। তবে বেশ কিছু উপকরন রয়েছে যেগুলো ছাড়া শুধুমাত্র তার নাম স্মরণ করে ভক্তিসহকারে পূজা দিলেই হয়। এতে Shiv ঠাকুর অসন্তুষ্ট হবেন না এবং শিব পূজাও সম্পূর্ণ হবে। আবার কিছু কিছু উপকরন রয়েছে যেগুলো ছাড়া কোনভাবেই শিবপূজা সম্পূর্ণ করা যাবে না। আসুন তাহলে জেনে নেই কি সেই উপকরণ যেগুলো ছাড়া শিব পূজা সম্পূর্ন করা যায় না। যেমন :


বেলপাতা // Belpata :

বেল পাতা হলো ত্রিফলক যুক্ত একটি পাতা। পুরান অনুযায়ী এই পাতার পিছনে ছিল লক্ষী দেবীর বাস। আবার বেলপাতা তিনগুণ (সতঃ, রজঃ, তমোঃ) তথা ত্রিদেব (ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর) এর প্রতীক। তাই বেল পাতা দেবাদিদেব মহাদেবের খুবই প্রিয়। আর এই কারনে শিবলিঙ্গ পূজায় বেলপাতা অবশ্যই লাগে। কথায় আছে যে, ১১ টি বেল পাতা দিয়ে মালা তৈরি করে শিবলিঙ্গকে অর্পণ করলে জীবন থেকে অশুভ প্রভাব দূরে সরে যায়।


ধুতুরা ফুল // Dhutura ful :

 ধুতুরা ফুল মহাদেবের কাছে খুবই প্রিয়। কোরআনের কথা অনুযায়ী ধুতুরা ফুল দিয়ে পূজা দিলে জীবনে সমৃদ্ধ আসে এবং জীবন সহজ হয়ে যায়।


আকন্দ ফুল // Akondo ful :

 আকুন্দ ফুলের পাঁচটি খন্ড থাকে, যা শিবের পঞ্চানন স্বরূপকে নির্দেশ করে থাকে। আকন্দ ফুলের রং সাদা যা সরলতা এবং সহজতার প্রতীক। Shiv হলেন আশুতোষ। আর তিনিও সরল এবং সহজ। তাই আকন্দ ফুল শিব ঠাকুরের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ফুল।


দুধ ও গঙ্গাজল // Dudh o ganga jal :

শিবলিঙ্গের মাথায় দুধ ও গঙ্গাজল দিতে হয়। এই প্রথা বহু প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। শিবলিঙ্গের মাথায় দুধ ও গঙ্গাজল দিতে তামার পাত্র ব্যাবহার করবেন। কথাই আছে শিবলিঙ্গের মাথায় দুধ ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করালে জীবন সুখের হয়।


তিল // Teel :

শিবলিঙ্গে তিল প্রদান করলে শনির সারে সাত দশা কেটে যায়। এই রীতিও বহু প্রাচীন কালের।


দুর্বা // Durba :

শিবলিঙ্গে দুর্বা ঘাস প্রদান করলে নীরোগ জীবন লাভ হয়ে থাকে। তাই শিবলিঙ্গে সবাই দুর্বা ঘাস প্রদান করে থাকেন।


কর্পূর // Korpur :

কর্পূরের সুগন্ধ Shiv ঠাকুর খুবই ভালোবাসেন। কর্পূর সমস্ত সংসারকে পবিত্র এবং শুদ্ধ করেন। কর্পূর দিয়ে Shiv puja করলে শিব ঠাকুর খুবই সন্তুষ্ট হন।


আতপ চাল // Atap chal :

আতপ চাল ধন এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। জীবনে আর্থিক সমৃদ্ধকে অব্যাহত রাখতে শিবলিঙ্গে আতপ চাল দিয়ে Shiv puja করা অনেক প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে।


শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?

Shiv puja বাচ্চা ছেলে মেয়ে উভয়ই করে থাকে। কারন এই পূজা ছোটবেলার থেকে করলে বিশেষ ফল লাভ হয়। তাছাড়া শিব পূজা করা খুবই সহজ। যারা মন্ত্র জানেন না তারাও খুব সহজে এই পূজা করতে পারেন। আর যারা মন্ত্র জানেন তাদের অবশ্যই মন্ত্র পাঠ করে Shiv puja করা উচিত। তবে মন্ত্র পাঠ করার কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন আপনাকে শুদ্ধ মনে মন্ত্র পাঠ করতে হবে আর মন্ত্র পাঠের অর্থ বুঝে মন্ত্র পাঠ করতে হবে। না হলে সব কিছু বিফলে চলে যাবে। আবার একটা কথা মনে রাখবেন Shiv হলেন ভক্তির বশ। ভক্তের হৃদয়ে তার বাস। মন্ত্র ছাড়া শুধুমাত্র ভক্তি সহকারে Shiv puja করলেই শিব অত্যন্ত তুষ্ট হন। শিব পূজা সব সময় উত্তর মুখে বসে করবেন। আর শিবলিঙ্গকেও উত্তর দিকে মুখ করে বসাবেন। কারন উত্তর দিকে হলেও ব্রহ্মলোকের পথ। আর মনে করে শিবলিঙ্গকে তামা কিংবা পাথরের পাত্রের উপর বসাবেন।


সম্পর্কিত পোস্ট :


সরস্বতী পূজার নিয়ম পদ্ধতি ও তাৎপর্য।

শিবরাত্রি ব্রোত কথার মাহাত্ম্য।


শিবের সোমবারের ব্রোত পালন // Shiver sombarer broto palon :

শিবের সোমবার ব্রোত পালনের বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তার আগে আপনাকে শিবলিঙ্গ এবং বানলিঙ্গের পার্থক্য জানতে হবে। কারন শিবলিঙ্গের মন্ত্র আলাদা এবং বানলিঙ্গের মন্ত্র আলাদা। নর্মদা নদীর জলে যে শিবলিঙ্গ পাওয়া যায় তাকে বানলিঙ্গ বলে। যাদের বাড়িতে বানলিঙ্গ আছে তারা আলাদা মন্ত্র পাঠ করবেন।


সোমবার সূর্য উদয়ের পর ৩ ঘন্টার মধ্যে Shiv puja সেরে নিতে হবে। দেরি হলেও ১২ টা পর্যন্ত্য অপেক্ষা করা যেতে পারে। কিন্ত ১২ টার পরে আর শিব পূজা করবেন না। এরপর ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে তারপরে পূজা শুরু করবেন।


শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?
শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?

শিব পূজা করার নিয়ম // Shiv puja korar niyom :

Shiv puja করার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন তাহলে একে একে সব জেনে নেই।


আসন শুদ্ধি // Ason shuddhi :

মনে করে পূজাতে বসার আগে আসন শুদ্ধি করে নিবেন। আসন শুদ্ধি করা হয়ে গেলে নিচের প্রক্রিয়াগুলো লক্ষ্য করুন।


পুষ্প শুদ্ধি // Puspo suddhi :

পুজোর আগে পুষ্প শুদ্ধি করাও বিশেষ প্রয়োজন। আসন শুদ্ধি করা হয়ে গেলে পুষ্প শুদ্ধি করে নিবেন।


দেহ ও মন শুদ্ধি // Deho o mon suddhi :

যে কোনো পূজা করার আগে দেহ ও মন শুদ্ধি করা প্রয়োজন। কারন দেহ ও মন শুদ্ধ থাকলে পবিত্রতার সাথে পূজা সম্পূর্ন করা যায়। কিন্তু দেহ ও মন শুদ্ধি করবেন কিভাবে ? এর একমাত্র পথ হলো বিষ্ণুর স্মরন। অর্থাৎ তার ধ্যান। সর্বদাই ঈশ্বরকে ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা দর্শন করা এবং তার স্বরূপকে উপলব্ধি করার মাধ্যমিক দেহ ও মনকে শুদ্ধ করা যায়।


স্বস্তিবাচন // Swasthibachan :

স্বস্তিবাচন হলো পূজার সাফল্য এবং অন্যের জন্যে মঙ্গল কামনা করা। অন্যের জন্যে মঙ্গল কামনা না করলে Shiv puja ফলদায়ক হয় না। আর অন্যের অমঙ্গল কামনা করে পূজা করলে নিজেরই অমঙ্গল হয়। তাই বিশ্বের সকলের মঙ্গল কামনা করে পূজা করা উচিত।


জলশুদ্ধি // Jalsuddhi :

জলশুদ্ধি অর্থাৎ জলকে শুদ্ধ করে নেওয়া। যে জল দিয়ে পুজো দিবেন সেই জলে তীর্থকে আহ্বান জানানো। জলশুদ্ধি মন্ত্র দ্বারা সপ্তনদীকে আহ্বান জানিয়ে জলকে শুদ্ধ করে নিতে হয়। এই সপ্তনদী হলো গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, কাবেরী, সিন্ধু, নর্মদা ও গদাবরী। জলশুদ্ধ করার পর সেই জল মাথায় দিলে সমস্ত তীর্থ স্নানের ফল লাভ হয়। এবং পূজা উপকরনগুলোর উপর দিলে সেগুলো শুদ্ধ হয়ে যায়।


সূর্যার্ঘ্য // Surjargho :

এরপর আমাদের সূর্যকে অর্ঘ্য দিতে হবে। সূর্য অর্থাৎ সূর্য দেব হলো আমাদের সকলের প্রানের উৎস। এই কথা আধুনিক বিজ্ঞানও মানে। তাই অর্ঘ্যের মাধ্যমে আমাদের প্রত্যক্ষ দেবতা সূর্যদেবকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।


এরপর ইন্দ্রাদি, দশাবতার, দশদিকপাল, গুরুদেব, নবগ্রহ, পঞ্চদেব, ইস্টদেবতা ও সমস্ত দেবদেবীর পূজা করা হয়। আর আসনের পাশে যদি অন্য কোনো মূর্তি থাকে তার পূজাও করে নিবেন। এরপর Shiv কে স্নান করিয়ে তার ধ্যান করে নিতে হবে। এবং সমস্ত উপচারগুলো নিবেদন করে শুরু করতে হবে Shiv puja।


ধ্যান মন্ত্র // Dhyan montro :

"ওঁম ধ্যায়েনিত্যঙ্গ মহেশং রজতগিরিনিভঙ্গ চারুচন্দ্রাবসতংসং

 রত্নাকল্পজ্জলাঙ্গঙ পরশুমৃগবরাভীতিহস্তঙ্গ প্রশংনম

পদ্মাসিনং সমন্তাৎ স্ততমমরগনৈব্যাঘ্রকৃত্তিঙ বসানং

বিশ্বাদ্যঙ বিশ্ববিজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবত্ত্বরং ত্রিনেত্রম"।।


সম্পর্কিত পোস্ট :


একাদশী কি? কিভাবে একাদশী পালন করা উচিত?

মর্যাদা পুরুষোত্তম রাম এবং রাম মন্দিরের কথা জেনে রাখুন।


শিব গায়েত্রী // Shiv gayatri :

"ওঁম তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমোহি তন্য রুদ্রঃ প্রচদোয়াৎ ওঁম''


অর্থাৎ রজতগিরির মতো যার আভা, যিনি চন্দ্রদেবকে ধারন করে আছেন, যার দেহ রত্নময়, যিনি পদ্মাসনে বোডে আছেন, বাঘের চামড়া পরিহিত, আনন্দ মূর্তি, সকল দেবতারা তাহার স্তব করে, সকল প্রকার ভয়নাশক, যিনি এই সমস্ত সংসারের আদি ও কারন, যার পঞ্চবদন এবং প্রতিটি বদনে ত্রিনয়ন সেই মহেশকে এইভাবে ধ্যান করতে হবে।


শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?
শিব কে ? শিব পূজা করার কয়েকটি মূল্যবান কথা। Who Is Shiv ? Some Valuable Words To Do Shiv Puja ?

মেয়েরা শিব পূজা করে কেন // Meyera shiv puja kore keno :

এক সময়ে বৃন্দাবনের গোপ বালিকারা Shiv puja করেছিল। মহাদেব শিব এখনও সেখানে গোপেশ্বর রূপে বিরাজিত রয়েছেন। সাদাসিধা এবং সরল গোপ বালিকারা শিবের কাছে প্রার্থনা করেন তারা যেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পতিরূপে লাভ করতে পারেন । Shiv হলেন আশুতোশ, তিনি অল্পতেই সন্তুষ্ট হন। গোপ বালিকাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে Shiv তাদেরকে আশীর্বাদ করেন, তারা যেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তাদের পতিরূপে লাভ করতে পারে।


আজকের মেয়েরা হয়তো সেই কথা অনুসরন করে শিব পূজা করে থাকে। এবং শিবের মতো পতি পাওয়ার প্রার্থনা করে। কিন্তু যারা জড়জাগতিক কামনা-বাসনার আশায় পূজা করে থাকেন তারা হলো হৃৎজ্ঞান অর্থাৎ যাদের জ্ঞান হারিয়ে গেছে। জড়জাগতিক কামনা-বাসনার উন্নতির জন্যে শিবের কাছে বর চেয়ে তার অপব্যাবহার করলে সেই বরই তার মৃত্যুর কারন হয়ে দাঁড়ায়। যেমনটা ভস্মাসুর, বানাসুর এমনকি রাবনের সাথেও হয়েছিল।


কিন্তু গোপ বালিকারা যে শিব পূজা করেছিল তাতে তাদের কোন দোষ ছিল না। কারন তারা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়ার আশায় Shiv puja করেছিল।


মেয়েরাই যে কেবল শিব পূজা করে তা নয়। কিন্তু কৃষ্ণ বহির্মুখ বদ্ধ জীবেরা জড়জাগতিক অনিত্য বস্তু লাভের আশায় শিবের আরাধনা করে থাকেন। তারা হয়তো জানে না যে, মহাদেব হলেন শ্রীবিষ্ণুর পরম ভক্ত। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব। শিবের ভক্তরা তার উপদেশে শ্রী বিষ্ণুর চরনে আশ্রয় লাভ করতে পারেন। একজন বৈষ্ণব যদি শিবরাত্রি ব্রোত পালন করেন তাহলে সেই বৈষ্ণব শিবের কৃপায় হরি ভক্তি প্রেম বৃদ্ধি করতে পারেন।



শিব গীতা কি // Shiv gita ki :

আপনারা হয়তো ভগবত গীতার নাম শুনেছেন। কিন্তু কেউ কি শিব গীতার নাম শুনেছেন ? অনেকে হয়তো এই শিব গীতার নাম প্রথমবার শুনছেন। ভগবত গীতা যেমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণী। ঠিক তেমনই শিব গীতা হল শিবের মুখ নিঃসৃত বাণী।


ভগবত গীতা ভীষ্ম পর্ব থেকে শুরু হয়। তাকে কৃষ্ণার্জুন সংবাদ বলা হয়ে থাকে। আর শিব গীতা হল শিবরাঘব সংবাদ। অর্থাৎ শিব গীতায় Shiv এবং মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রামের সাথে কথাপোকথন হয়েছিল। শিব গীতাতেও রয়েছে ১৬ টি অধ্যায়। যথা :


১ - শিবভক্তি নিরুপন।

২ - বৈরাজ্ঞ উপদেশ।

৩ - বিরজাদীক্ষা নিরুপন।

৪ - শিব প্রাদুর্ভাব।

৫ - রামকে বর প্রদান।

৬ - বিভূতি যোগ।

৭ - বিস্বরূপ দর্শন।

৮ - পিন্ডৎপত্তি কথন।

৯ - দেহ স্বরূপ নির্ণয়।

১০ - জীব স্বরূপ কথন।

১১ - জীবগতি নিরুপন।

১২ - উপাসনা জ্ঞান ফল।

১৩ - মোক্ষ নিরুপন।

১৪ - পঞ্চকোশবপাদন।

১৫ - ভক্তিযোগ।

১৬ - ও শিবগীতা অধিকারী নিরুপন।


যেভাবে অর্জুনের প্রশ্নে সৃষ্টি হয়েছে ভগবত গীতা। ঠিক সেভাবেই শ্রী রামচন্দ্রের প্রশ্নের উত্তরে তৈরি হয়েছে শিবগীতা। যা একজন ভক্তের জন্যে জ্ঞান অর্জন করার অত্যন্ত মহত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ।


উপসংহার // Uposonghar :

Shiv ঠাকুর অল্পতেই সন্তুষ্ট হন। তাই Shiv puja করে তার থেকে বিশেষ কিছু লাভ করা যায়। এই সংসারে সব থেকে দামী জিনিস হল কৃষ্ণ প্রেম বা কৃষ্ণ ভক্তি। যেহেতু শিব শংকর হলেন পরম বৈষ্ণব। সুতরাং তার কাছে কৃষ্ণ ভক্তি বা কৃষ্ণ প্রেম চেয়ে তার পূজো করুন। আপনাদের কাছে এই অনুরোধটি রাখছে Sanatan sikkha।


FAQ :

এখন কিছু প্রশ্ন এবং তার উত্তরের দিকে নজর দেওয়া যাক। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের সম্পর্কে আপনাদের জানা খুবই দরকার।


শিবকে পঞ্চানন বলা হয় কেন

কারন শিবের শুভ সংখ্যা হল পাঁচ । তার প্রধানমন্ত্র হল নমোঃ শিবায় যা পাঁচটি অক্ষর দ্বারা গঠিত। শিবেশ্বরের পঞ্চ মন্ত্র দিয়ে গঠিত। যাদেরকে একসাথে পঞ্চ ব্রাহ্মণ বলা হয়। যথা সদ্যজাত, বামদেব, তৎপুরুষ, অঘোর এবং ঈশান শিবের মূর্তি। এইসব কারণে শিবকে পঞ্চানন বলা হয়ে থাকে।

শিবলিঙ্গ শব্দের অর্থ কি

শিব শব্দের অর্থ হলো মঙ্গল। এবং লিঙ্গ শব্দের অর্থ প্রতীক। অর্থাৎ শিবলিঙ্গ শব্দের অর্থ হলো মঙ্গলের প্রতীক।

শিবলিঙ্গের মাথায় তিনটি সাদা দাগ থাকে কেন

শিবলিঙ্গের মাথায় তিনটি তিলকের দাগ থাকে কারন সেই তিনটি দাগ হলো ব্রহ্মাপীঠ, বিষ্ণুপীঠ এবং শিবপীঠ। যা আদি এবং অনন্ত সত্তার প্রতীক।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.