Breaking Ticker

অনেকে Radharani কে Krishna Kalonkini বলে, তবুও Radharani প্রতিবাদ করে না কেন ?

Krishna kalonkini : প্রিয় সনাতনী ভক্তরা, কেমন আছেন আপনারা সবাই। বেশ কিছু কাজে ব্যাস্ত থাকায় আমার এই পোস্টটি লিখতে অনেকটা দেরী হয়ে গেল। কিছু মনে করবেন না প্লিজ। Sanatan sikkha তে আজকের পোস্টে খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী আমি লিখতে চলেছি। আশা করছি  আপনাদের সবাইকে আজকের এই পোস্টটি  ভালো লাগবে। শুধু আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়বেন। আজকে আমি যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব সেটা হল অনেকে শ্রীমতি  রাধারানীকে "krishna kalonkini", বলে, আর রাধারানী তাতে কোন কিছুই মনে করে না কেন ? চলুন তাহলে শুরু করি আজকের আলোচনাটি।


Radharani ke krishna kalonkini

অনেকে শ্রীমতি রাধারাণীকে "krishna kalonkini" বলে থাকে। কিন্তু তবুও রাধারানী কিছু মনে করেন না  কেন ? এই বিষয়টি জানার আগে আমরা জেনে নিব যে 'রাধা' আসলে কি ? তিনি আসলে কে ? কেন তার নাম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামের আগে নেওয়া হয় ? আবার radha krishna সম্পর্কেও কিছু কথা জেনে নিবো। অবশেষে জানবো তাকে অনেকে কৃষ্ণ কলঙ্কিনী বলে থাকে কেন ? এবার তাহলে সবকিছুই এক এক করে জেনে নেই।



রাধা শব্দের অর্থ কি :

লক্ষ্য করে দেখুন 'রাধা' শব্দে দুটি বর্ণ রয়েছে। একটি হলো 'রা' এবং অপরটি হল 'ধা'। এই দুটি বর্ণই রমন শব্দ থেকে নেওয়া হয়েছে। 'রা' মানে হলো আনন্দ। এবং 'ধা' বর্ণের অর্থ হল ধারন করা। অর্থাৎ যিনি আনন্দকে ধারন করেন তিনিই হলেন রাধা। কিন্তু এখানে একটি প্রশ্ন জাগে যে, আনন্দটা কি বা কে ? বলে দেই, আনন্দটা হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। কারন তার আরেক নাম 'সচ্চিদানন্দ'। অর্থাৎ 'সৎ', 'চিৎ', 'আনন্দ'। সুতরাং, 'রাধা' শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে মনে প্রানে ধারন করে রেখেছেন। এর অর্থ এটাও হয় যে, আমরাও শ্রীকৃষ্ণের রাধারানী হতে পারি। অর্থাৎ আমরাও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে মনে প্রানে ধারন করতে পারি। কিন্তু রাধারানী হলো একজন মহিলা, তাহলে আমরা কিভাবে রাধারানী হতে পারবো ? এটাই ভাবছেন তো ? বলে দেই, এই সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ভগবান শ্রীকৃষ্ণেই হলো একমাত্র পুরুষ। আর আমরা বাকি সবাই মহিলা। এটাই সত্য কথা। এবং এটাই তত্ত্ব কথা। যা আপনাদের কেউ বলবেনা। চলুন এবার তাহলে জেনে নেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে 'সচ্চিদানন্দ' বলা হয় কেন ?


শ্রীকৃষ্ণকে 'সচ্চিদানন্দ' বলা হয় কেন :

কারন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কোনো বিষাদ নেই। তার মনে সুখ দুঃখের কোনো জায়গা নেই। তিনি এক অবস্থাতেই কেবলমাত্র আনন্দের মধ্যে স্থির হয়ে বিরাজিত রয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র আনন্দকেই বিহার করে থাকেন। এই কারনেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে 'সচ্চিদানন্দ' বলা হয়ে থাকে। আর এই আনন্দটাই হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিরাজ স্থান। অর্থাৎ যারা আনন্দকে ধারন করে আছেন তারাই 'রাধা'। তাহলে বুজতেই পারলেন যে শ্রীমতি radharani ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে কেন এতটা প্রিয়। এবার প্রশ্ন জাগে, আমাদের দেহে এই আনন্দটা কোথায় অবস্থিত হয়ে আছে ? অর্থাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের দেহে ঠিক কোথায় অবস্থান করে আছেন ? krishna kalonkini র ব্যাপারটা না হয় আমরা একটু পরেই দেখি।


মানবদেহে পাঁচটি স্তর বা কোষ রয়েছে। এই পাঁচটি স্তরের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ 'পরমাত্মা' 'আত্মা' স্বরূপে ঠিক কোথায় বিরাজিত হয়ে আছেন আসুন জেনে নেই। মানবদেহে পাঁচটি স্তর বা কোষের নাম হলো :-


১> অন্নময় কোষ।

২> প্রানময় কোষ।

৩> মনময় কোষ।

৪> বিজ্ঞানময় কোষ এবং 

৫> আনন্দময় কোষ।


এই পাঁচটি কোষের উপরে একটি কথা রয়েছে। যেটা নাকি পরম বৈষ্ণবরা বা সাধুরা বলে থাকেন। কথাটি হলো "অন্নময়, প্রানময়, মনময় সহ বিজ্ঞানময়, আনন্দময়, এই পঞ্চ লহ"।


অন্নময় কোষ :

মানব দেহটাই হচ্ছে অন্নময় কোষ। অর্থাৎ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যত প্রাণী আছে তাদের দেহ অন্ন দিয়ে গঠিত। অন্ন ছাড়া তারা বাঁচতে পারবে না। সুতরাং, আমাদের এই স্থূল শরীরটাই হচ্ছে অন্নময় কোষ।


প্রানময় কোষ :

আমি আপনাদের বলে দিয়েছি যে, আমাদের দেহটা হচ্ছে অন্যময় কোষ দিয়ে গঠিত। এই অন্নময় কোষের ভেতরে আরো একটি সূক্ষ্ম শরীর রয়েছে, যেটাকে প্রান ময়-কোষ বলা হয়ে থাকে।


মনময় কোষ :

মনময় কোষ, প্রানময় কোষের ভেতরে আরো সূক্ষ্ম অবস্থায় রয়েছে। চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন। একজন ভক্তের কাছে কোন কিছুই কিন্তু অসম্ভব নয়। "রাধে রাধে"।


বিজ্ঞানময় কোষ :

মনোময় কোষের ভিতরে বিজ্ঞানময় কোষ আরোও সূক্ষ্ম অবস্থায় রয়েছে।


আনন্দময় কোষ :

আনন্দময় কোষ, বিজ্ঞানময় কোষের ভিতরে আরও সূক্ষ্মভাবে অবস্থিত রয়েছে। এই আনন্দময় কোষেই পরমাত্মা, আত্মা স্বরূপে বিরাজিত হয়ে আছেন। যেখানে রাধা রয়েছেন ( আনন্দ ধারনকারী ), সেখানে শ্রীকৃষ্ণ রয়েছেন। অর্থাৎ যেখানে রাধা নেই, সেখানে শ্রীকৃষ্ণও নেই। 

আশা করি এই কথাটাকে আমি, আপনাদেরকে ভালোভাবে বোঝাতে পারলাম।


radha krishna

Sri krishna কেন radharani কে মনে প্রানে এতটা ভালোবাসেন :

কারন রাধারানি হলেন প্রেমের দেবী। তিনি কৃষ্ণ প্রেমে তার সবকিছু সমর্পিত করে দিয়েছিলেন। তিনি তার কাছে তার নিজের বলতে কিছুই রাখেনি। রাধারানি কৃষ্ণ প্রেমের কারনে তার অতীত, বর্তমান, এবং ভবিষ্যত, সব কিছুই ত্যাগ করে দিয়েছিলেন। তাই রাধারানীকে ত্যাগের দেবীও বলা হয়ে থাকে। এমনকি রাধারানি তার নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, তেজ, মন, প্রান, সবকিছুই ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সমর্পিত করে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ এও বলতে পারেন যে রাধারানী তার সর্বস্ব ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আর ভগবানের কাছে এইরকম ভক্তই সবথেকে বেশি প্রিয় হয়। কথাই তো আছে যে "আমার থেকে আমার ভক্ত বড়ো"। radha krishna র মতো এইরকম প্রেম আরো একটা খুঁজে পাবেন না। কারন তাদের দুজনের প্রেম অমর আর এই সংসারের জন্য একটি উদাহরন। আপনি radharani র এই পোস্টটি পড়লে বুজতে পারবেন যে তিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য কি করতে পারেন আর কি না করতে পারেন ? তাহলে শ্রীকৃষ্ণ কেন রাধারানীকে মনে প্রানে ভালোবাসবে না বলেন তো ? আমরাও যদি রাধারানির মতো হতে পারি তাহলে তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদেরকেও মনে প্রানে ভালোবাসবেন। আর লোকে এই রাধারানীকে নাকি একজন সামান্য মহিলা মনে করে তাকে krishna kalonkini বলে। ভাবা যায়! যারা বুঝেন তারা কোনদিনই এরকম কথা বলবে না। ব্যাপারটি একটু গল্পের সাহায্যে ভালোভাবে বুঝে নেওয়া যাক।


শ্রীকৃষ্ণ ও রুক্মিণীর গল্প :

গল্পের আগেই বলে দেই, রানী রুক্মিণী হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিবাহিতা স্ত্রী। তিনি একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দুধ পান করতে দিয়েছিলেন। দুধটা বেশ গরম ছিল। আর এই জিনিসটা রানী রুক্মিণী লক্ষ্য করেননি। আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অতি প্রেমের সহিত সেই দুধ পান করেন। দুধ গরম থাকায় তার মুখে ঠোসা পড়ে যায়। এবং যন্ত্রণায় তিনি "হে রাঁধে" "হে রাধে" বলতে থাকেন।


এই কথা শুনে রানী রুক্মিণী ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন রাধার কাছে এমন কি আছে যা আমার কাছে নেই! তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রানী রুক্মিণীকে অনুরোধ করলেন যে তিনি একবার যেন রাধারানীর সাথে দেখা করেন। নিজের স্বামীর কথা পালন করতে রানী রুক্মিণী বেরিয়ে পড়লেন শ্রীমতির রাধারানীর সাথে দেখা করার জন্যে।


রানী রুক্মিণী, রাধারানীর সাথে দেখা করতে গিয়ে একজন মহিলাকে দেখলেন। দেখলেন তার দিব্য তেজ এবং দেখলেন খুব সুন্দর ছিল সেই মহিলাটি। রানি রুক্মিণী তাকেই রাধারানী ভাবতে লাগলেন। আসলে সেই মহিলাটি ছিল রাধারানীর দাসী। কিন্তু সেই দাসী রানী রুক্মিণীকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন তার এখানে আসার কারন কি ? তারপরে সেই দাসীকে রানী রুক্মিণী সব কিছু বললেন। উত্তরে সেই দাসী রানি রুক্মিণীকে বললেন আমি রাধারানী নই। আমি হলাম তার দাসী। আর রাধারানীর সাথে দেখা করতে হলে এইরকম সাতজন দাসীকে পার করতে হবে (হরে কৃষ্ণ )। রুক্মিণী একে একে সাতজন দাসীকে পার করতে লাগেন আর দেখেন একের পর এক সুন্দর, চমৎকারী, এবং দিব্য, দাসীকে। এই দেখে তিনি অবাক হয়ে মনে মনে ভাবতে লাগেন যে, রাধারানীর দাসী যদি এত সুন্দর এবং দিব্য হয় তাহলে রাধারানী স্বয়ং কতটা দিব্য এবং চমৎকারি হবে।


যাই হোক, সবশেষে রানি রুক্মিণী রাধারানীর সাথে দেখা করলেন। রাধারানীকে দেখে তিনি সত্যিই বিস্মিত হন এবং ভাবেন যে শ্রীকৃষ্ণ কেন বার বার রাধারানীর নাম করেন। তিনি ব্যাপারটি বুঝতে পারেন। এই জন্যই তো ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, রানী রুক্মিণীকে রাধারানীর সাথে দেখা করতে পাঠান। তিনি লক্ষ্য করে দেখেন যে রাধারানীর শরীরে ফোসকা পড়ে গেছে। রুক্মিণী জিজ্ঞাসা করায় রাধারানী বলেন আপনি যে উনাকে গরম দুধ দিয়েছেন তাতে ওনার গরম লাগে। এবং তিনি "হে রাধে হে রাধে" বলেন। তার জন্যেই আমার শরীরে ফোসকা পড়ে গেছে। এতটা গভীর প্রেম ছিল রাধা এবং কৃষ্ণের। 


এরপর রানি রুক্মিণী যখন বলেন এটা কি করে সম্ভব ? তখন দেবী রাধা বলেন এটা তখনি সম্ভব যখন আপনি কারো হৃদয়ে বাস করবেন, মস্তিষ্কে নয়। সবশেষে রাধারানী রুক্মিণীকে বললেন এরপর থেকে আপনি যদি কোন কিছু ওনাকে সেবা করতে দেন তাহলে সবার আগে আপনি নিজে সেবা করে দেখে নিবেন। 


ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আশা করি এবার আপনারা বুঝতে পারলেন যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন রাধারানীকে মনে প্রানে এতটা ভালোবাসেন। আমার মনে হয় সত্যিই তারা কিছু বোঝেনা যারা রাধারানীকে krishna kalonkini বলে থাকেন।


রাধা কৃষ্ণের গল্প 

রাধা কৃষ্ণের সাথে নিধুবনের সম্পর্ক্য কি 

রাসলীলার রহস্য কথা 


Radharani আসলে কে ? এবং তিনি সবসময় শ্রীকৃষ্ণের পাশে থাকেন কেন :

Radharani হলেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একনিষ্ঠ এবং শ্রেষ্ঠ একজন ভক্ত। তিনি সংসারে সমস্ত জীবকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, সম্পুর্ন সমর্পনের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণকে কিভাবে ভালবাসতে হয়। আর সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই যে, ভগবান তার পরম ভক্তকে সর্বদা তার পাশে রাখেন। এই কারনেই রাধারানী সবসময় শ্রীকৃষ্ণের পাশে থাকেন।


রাধারানীর নাম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামের আগে নেওয়া হয় কেন :

রাধারানীর নাম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নামের আগে নেওয়া হয়। যেমন : 'রাধা কৃষ্ণ', 'রাধা গোবিন্দ', 'রাধা মাধব', ইত্যাদি। কি ঠিক তাইতো ? আমি তো আগেই বলেছি যে, Radharani হলেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একনিষ্ঠ এবং শ্রেষ্ঠ একজন ভক্ত। পরমেশ্বর ভগবানের অন্তরঙ্গার শ্রেষ্ঠ আরাধিকা শক্তি হলেন শ্রীমতি রাধারানী। তিনি সমস্ত জীবকুলকে শিখিয়েছেন কিভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসতে হয়। এই কারনেই রাধারানীর পাদপদ্মে আগে আশ্রয় নিতে হয়। এতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরোও বেশি সন্তুষ্ট হন। শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভের জন্যে এই তত্ত্বকে অনুসরন করে ভক্তরা আগেই শ্রীমতি রাধারানীর নাম উল্লেখ করেন।


radha krishna

Radharani হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একনিষ্ঠ এবং শ্রেষ্ঠ একজন ভক্ত এই কথার প্রমান কি :

অবশ্যই এই কথাটির প্রমান রয়েছে যে Radharani হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একনিষ্ঠ এবং শ্রেষ্ঠ একজন ভক্ত। যেটা আমাদের সনাতনী ভক্তদের জানা খুবই দরকার। এই প্রমানটির কথা জানার পর আশা করি আর কেউ শ্রীমতী রাধারানীকে krishna kalonkini বলবে না।


প্রমান :

একবার দেবর্ষি নারদ মুনির খুব অহংকার হয়েছিল। তিনি ভাবতে লাগলেন আমিও তো ভগবানের শ্রেষ্ঠ ভক্ত। তাহলে আমার নাম কেউ নেয় না কেন ? সবাই শুধু "রাধে রাধে" বলে কেন ? নারদ মুনি তার মনে এই রকম ব্যাথা নিয়ে একদিন শ্রীকৃষ্ণের কাছে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন শ্রীকৃষ্ণ প্রচন্ড মাথা ব্যথায় ছটফট করছেন। তারপর...


নারদ : প্রভু, আপনার মাথা ব্যাথার কোন উপচার আছে কি ? যদি থাকে তাহলে আমাকে বলেন। যদি আমার রক্ত দিয়ে আপনার মাথা ব্যাথার উপশম হয় তাহলে আমি রক্ত দিতেও রাজি আছি। আমি আমার বুক চিরে রক্ত দিব।


শ্রীকৃষ্ণ : না নারদ, তার কোন দরকার হবে না। কোন ভক্ত যদি তার চরণ ধোয়া জল আমাকে সেবা করায় তাহলে আমার মাথা ব্যথার যন্ত্রনা কমে যাবে। তুমিও তো আমার একজন ভক্ত। তাহলে তুমি আমাকে তোমার চরম ধোয়া জল সেবা করাও।


নারদ : এ কি করে সম্ভব প্রভু। এ তো ঘোরতর অপরাধ। আমি এই অপরাধ করতে পারবো না প্রভু। আমাকে ক্ষমা করবেন।


শ্রীকৃষ্ণ : তুমি তাহলে একবার রুক্মিণীর কাছে যাও। গিয়ে উনাকে আমার মাথা ব্যথার যন্ত্রনার কথা বলো। 


নারদ : প্রভুর আদেশে নারদ রুক্মিনীর কাছে গেলেন। সেখানে গিয়ে তাকে শ্রীকৃষ্ণের মাথা ব্যথার কথা বললেন। এই কথা রুক্মিণী শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। তারপর নারদমুনি যখন উনাকে চরণ ধোয়া জলের কথা বললেন, তখন রানী রুক্মিণী বললেন...


 রুক্মিণী : মুনিবর, চরণ ধোয়া জল অর্থাৎ চরণামৃত। আমি কি করে তা প্রভু শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করাতে পারি। এই জঘন্য অপরাধ আমি করতে পারবো না। তাহলে আমার নরকেও ঠাই হবে না। এই কার্য আমার দ্বারা হবে না। 


দেখলেন তো সনাতনী ভক্তরা, সবাই যার যার কথা চিন্তা করলেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাথায় ব্যাথার কথা কেউ চিন্তা করলেন না।


নারদ : তিনি পুনরায় শ্রীকৃষ্ণের কাছে গেলেন। এবং তাকে সবটাই বললেন।


শ্রীকৃষ্ণ : হে নারদ, তুমি তাহলে একবার রাধারানীর কাছে যাও।


নারদ : এবার তিনি রাধারানীর কাছে গেলেন। সেখানে গিয়ে তাকে শ্রীকৃষ্ণের প্রবল মাথা ব্যাথার কথা বললেন। এই কথা শোনার পর রাধারানী সঙ্গে সঙ্গে একটি পাত্রে তার চরণ ধোয়া জল নারদ মুনিকে দিয়ে বললেন...


রাধা : হে মুনিবর, আমি জানি এটা অপরাধ। কিন্তু এই অপরাধের কারনে যদি আমার প্রিয়তমার মাথার যন্ত্রনা শান্ত হয় তাহলে আমি এই অপরাধ করতেও রাজি আছি।

এর জন্য যদি আমাকে অনন্তকাল পর্যন্ত রৌরব নরকে ঠাই পেতে হয় আমি তাতেও রাজি আছি। আপনি তাড়াতাড়ি এই জল নিয়ে গিয়ে প্রভুকে সেবা করান।


নারদ : ( প্রনাম করে ) হে রাধারানী, আমি নিজেকে প্রভুর শ্রেষ্ঠ ভক্ত মনে করতাম। কিন্তু আজ আমি বুঝেছি, শ্রীমতি রাধারানী ছাড়া প্রভুর শ্রেষ্ঠ ভক্ত আর কেউ হতে পারে না। আপনাকে আমার কোটি কোটি প্রনাম। আর এবার আমি বুঝেছি যে, শ্রীকৃষ্ণের নামের আগে আপনার নাম কেন নেওয়া হয় এবং কেন ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের আগে আপনাকে আরাধনা করে ! ( হরে কৃষ্ণ )


প্রিয় ভক্তগন, এটি ছিল একটি সত্য কাহিনী। এই কাহিনীতে প্রমান হয় যে, একমাত্র শ্রীমতি রাধারানী হলেন শ্রীকৃষ্ণের একনিষ্ঠ ও শ্রেষ্ঠ ভক্ত। রাধারানী হলেন শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত। krishna kalonkini নয়।


বাস্তবে রাধারানী কে :

রাধারানী হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদি শক্তি। রাধা এবং কৃষ্ণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তারা দুজনে একই বস্তু, অর্থাৎ একই আত্মা। শুধুমাত্র লীলা রস আস্বাদন করার জন্যে তারা দুটি দেহ ধারন করেছেন। রাধারানী হলেন পরম কৃপাময়ী। তার কৃপা ছাড়া কৃষ্ণ প্রেম প্রাপ্ত করা যায় না।


পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, আনন্দ প্রদান করার জন্য তার নিজের বাম অংশ থেকে রাধারানীকে সৃষ্টি করেছেন। রাধারানী হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদিশক্তি। তিনি তার শক্তির বলে অসংখ্য গোপী, এবং লক্ষ্মী দেবীদের সৃষ্টি করেছেন। তা শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি বিধানের জন্যে।


তবে সাধারন লোকেরা এই তত্ত্ব জানেন না। তারা না জেনে শ্রীমতি রাধারাণীকে একজন সাধারন নারী হিসেবে জ্ঞান করেন। কারন, কামের বশবর্তী হয়ে তারা এই জগতের সমস্ত কিছুই কামময় দৃষ্টিতে দর্শন করেন।


কিন্তু বাস্তব কথা হলো শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীমতি রাধারানীর সমস্ত লীলাই হচ্ছে প্রেমময়। কিন্তু দেখেন, এই সংসারে প্রেমের লেশমাত্র গন্ধ নেই। এই সংসার হচ্ছে কামময়। কাম এবং প্রেমের মধ্যে যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে এটা সাধারণ লোকেরা জানেনা। এই বিষয় নিয়ে আমি একটি পোস্ট লিখেছি। যদি আপনারা না পড়ে থাকেন তাহলে এখানে ক্লিক করে পোস্টটি পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।


Radharani আসলে কি :

Radharani হলেন মূল প্রকৃতি। আর প্রকৃতি থেকেই সমস্ত জগতের সৃষ্টি হয়েছে। সেই প্রকৃতিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই গর্ভধান করেন। অর্থাৎ প্রকৃতিতে বীজ প্রদান করেন। প্রকৃতি, অর্থাৎ রাধা থেকেই সমস্ত জগতের সৃষ্টি। এই সূত্র হিসাবে শ্রীমতি রাধারানী হলেন সমস্ত জগতের মাতা। এবং শ্রীকৃষ্ণ হলেন জগৎ পিতা।


radha krishna

রাধারাণীকে krishna kalonkini বলায় তিনি প্রতিবাদ করেন না কেন :

একবার sri krishna রাধারানী কে বলেন হে রাধে তোমাকে লোকেরা krishna kalonkini বলে। তবুও তুমি প্রতিবাদ করো না কেন ? রাধারানী খুব সুন্দর একটি উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি বলেন আমাকে যদি শুধু কলঙ্কিনী বলতো তাহলে আমি প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু আমাকে লোকেরা krishna kalonkini বলে তাই আমি প্রতিবাদ করি না। যখন লোকেরা আমাকে "কৃষ্ণ কলঙ্কিনী" বলে তখন আমি কলঙ্কিনী শুনতে পাই না। শুধুমাত্র আপনার নাম কৃষ্ণই শুনতে পাই। তাই আমি ওদের প্রতিবাদ করি না। কারন যে হৃদয় লজ্জায় আবৃত থাকে সেখানে প্রিয়তমের স্থান কোথায় ?


এই কথা শুনে শ্রীকৃষ্ণ রাধারানীকে বললেন রাধে! তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাই না! তাই তুমি হলে আমার প্রেমের গুরু। তোমার এই প্রেমের ঋণ আমি এই জন্মে শোধ করতে পারব না। কিন্তু আগামী কলি যুগে আমি তোমার হৃদয় এবং আমার শরীর নিয়ে জন্ম নিব। এবং তোমার প্রেমের ঋণ শোধ করব। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগে গোবিন্দের 'গৌ' এবং রাধার 'রা' অর্থাৎ 'গৌরা' হয়ে জন্মগ্রহন করেছিলেন।


নিজেই কৃষ্ণ হয়ে, নিজেই বাহু তুলে হরিনাম প্রচার করলেন। কারন বাহু তুলে আত্মসমর্পন না করলে ঈশ্বরের কৃপা লাভ হয় না। এইভাবে গোপীরাও আত্মসমর্পন করেছিলেন। চলুন তাহলে আরো একটু কথা বলি...


গোপীদের আত্মসমর্পন :

একদিন প্রান গোবিন্দ গোপীদের বস্ত্র চুরি করে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। তখন গোপীরা যমুনায় স্নান করছিল। একটু পরে গোপীরা দেখেন তাদের বস্ত্র গোবিন্দ লুকিয়ে রেখেছেন। তারা এক হাত দিয়ে লজ্জা নিবারন করে এবং অন্য হাত দিয়ে গোবিন্দের কাছে বস্ত্র চায়।


গোবিন্দ : এসে বস্ত্রগুলো নিয়ে যাও।


গোপীরা : দেখছো না, আমরা নিবস্ত্র হয়ে আছি। কি করে যাবো।


গোবিন্দ : যেভাবে জলে নেমেছো সেভাবে এসো।


গোপীরা : নির্লজ্জ, বেহায়া!


গোবিন্দ : আমি আবার কোথায় নেই ? আমি আকাশে, বাতাসে, জলে, স্থলে, সব জায়গায় আছি। যদি বস্ত্রগুলো পেতে চাও তাহলে এসে নিয়ে যাও। আর এক হাতে কিছু দিতেও নেই আবার নিতেও নেই। 


তখন গোপীরা আত্মসমর্পণ করলো এবং তাদের বস্ত্রগুলো ফিরে পেল। তারপরে তারা নবদ্বীপে ফিরে যায়। 


গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু কেশব ভারতীর কাছে দীক্ষা নেন। তিনি দুই মাতাল ভাই জগাই এবং মাধাই কে উদ্ধার করেন। তারপর তিনি কৃষ্ণ নামে বিভোর হয়ে হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ বলতে বলতে নীলাচলে অর্থাৎ পুরীতে চলে যান। যখন তার মধ্যে কৃষ্ণভাব জন্মে তখন তিনি রাধে রাধে বলে বিভোর হয়ে যান। আবার যখন তার মধ্যে রাধা ভাব জাগে তখন তিনি কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে বিভোর হয়ে যান। এবং তার পিছনে ছুটে চলে অসংখ্য ভক্তগন।



প্রিয় সনাতনী ভক্তরা আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ এতক্ষন ধরে krishna kalonkini পোস্টটি পড়ার জন্যে। আমি এই পোস্টটির মাধ্যমে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আপনাদেরকে অধিক থেকে অধিকতর তত্ত্ব ও তথ্য তুলে ধরার। এই পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমি আশা করি sanatan sikkha র এই পোস্টটির মাধ্যমে আপনারা অনেক নিগুর তথ্য জানতে পেরেছেন। সবাই ভালো থাকবেন। জয় রাধে।


FAQ :

শ্রীকৃষ্ণ রাধারানীকে বিবাহ করেননি কেন?

কারন বিবাহ করার জন্যে দুটি আত্মার দরকার হয়। আর রাধা কৃষ্ণ একই আত্মা। তাই শ্রীকৃষ্ণ রাধারানীকে বিবাহ করেননি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.