Maa kali হলো শক্তি, ভক্তি, এবং মুক্তিদাতা। হে মা কালী তোমার চরণে ঠেকাই মাথা। হে মা কালী তুমিই হলে জগতের মাতা। তোমার চরণে জানাই শতকোটি প্রনাম। এবার তাহলে শুরু করছি maa kali সম্পর্কে কিছু রহস্যজনক কথা।
কালী শব্দের অর্থ কি :
কালী শব্দ কোনো ব্ল্যাক বা কালো থেকে আসেনি। কালী শব্দ এসেছে কাল অর্থাৎ সময় থেকে। এই দেবী হলেন মহাকালী আর মহাদেব হলেন মহাকাল। আর এই কালের বা সময়ের কোনো শুরু বা শেষ নেই।
মা কালীর গায়ের রং কালো কেন :
পুরাণ কথা অনুযায়ী maa kali হলেন মা মহামায়ার কালিকা শক্তি। অসুরদের অত্যাচারের ফলে দেবকুল এবং মানবকুল অত্যাচারিত হতো। আর তাদের দুঃখ ও কান্না মায়ের সহ্য হতো না। তিনি তো সবার মাতা। তাই তিনি তার পুত্রদের দুঃখ এবং কান্না সহ্য করতে পারতেন না। অসুরদের অত্যাচারের কারনে মা কালী ক্রোধে ফেটে পড়তেন। যার ফলে তার দেহ থেকে জ্যোতি নির্গত হয়। এবং তিনি কালোরূপ ধারন করেন। কখনো কখনো মাকে শ্যামবর্ণ রূপেও দেখা যায় যা কোমলতা জাগায়।
মা কালীর দেহের বর্ননা :
Maa kali র প্রতিটি অংশ হলো গভীর অর্থ সম্পন্ন প্রতীক। কিরকম সেই অর্থ সম্পন্ন প্রতীক আসুন জেনে নেওয়া যাক।
কালো চুল :
দেবীর মাথায় রয়েছে খোলা কালো চুলের ঢল। তিনি মুক্তকেশী অর্থাৎ তার চুল খোলা। আর মুক্তকেশ হলো বৈরাজ্ঞের প্রতীক। তিনি জ্ঞানের দ্বারা মায়ার বন্ধনকে কাটিয়েছেন। তাই maa kali হলেন চিরবৈরাজ্ঞময়ী মাতা ।
ত্রিনয়ন :
মায়ের কাছে রয়েছে তিনটি নয়ন। এই ত্রিনয়ন সূর্য, চন্দ্র, এবং অগ্নির প্রতীক। সূর্য, চন্দ্র, এবং অগ্নি, যেমন অন্ধকারকে বিনাশ করে, ঠিক তেমনি মায়ের ত্রিনয়ন এই জগতের সমস্ত অজ্ঞতা এবং অজ্ঞানতা স্বরূপ অন্ধকারকে দূর করে। এবং সমস্ত জগৎকে আলোময় করে। মা তার তিনটি নয়ন দিয়ে অতীত, বর্তমান, এবং ভবিষ্যতকে দর্শন করেন। ঠিক তেমনি তিনি সত্য, শিব, এবং সুন্দরকে প্রত্যক্ষ করে থাকেন। আর এই তিনটি শক্তি হলো সৃষ্টি স্থিতি এবং প্রলয়ের কর্তা। অর্থাৎ মা তার ত্রিনয়ন দ্বারা সমস্ত কিছু প্রত্যক্ষ করে থাকেন।
মুন্ডমালা :
মা হলেন মুন্ডমালিনী। তার গলায় রয়েছে ৫০ টি মুন্ডের মালা। এই মূল্য গুলি হল ৫০ টি বর্ণের প্রতীক। অর্থাৎ ১৪ টি স্বরবর্ণ এবং ৩৬ টি ব্যঞ্জনবর্ণ। যা বীজমন্ত্রের প্রতীক। অক্ষর হল ব্রহ্ম যার ক্ষয় নেই। আর এই অক্ষর দিয়েই শব্দের উৎপত্তি যার অবস্থান মস্তকে। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রের দ্বারা দেব দেবীকে স্তুতি করি। আর এই মন্ত্রের অবস্থান সহশ্রার পদ্মের মধ্যে। তাই অক্ষরের প্রতীক মুন্ড দেবী তার গলায় ধারন করেছেন।
জিহ্বা ও দাঁত :
মা তার সাদা দাঁত দিয়ে লাল রঙের জিহ্বাকে কামড় দিয়ে ধরে রেখেছেন। লাল রং হলো রজগুন আর সাদা রং হলো সত্যগুন। রজগুন হলো ভোগের গুন যা ঈশ্বর বিমুখ করে। রজগুন দমনের জন্য মায়ের এই প্রতীক। অর্থাৎ দেবী তার সাদা দাঁত দিয়ে লাল রঙের জিহ্বাকে কামড় দিয়ে রেখে ভক্তকুলকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, সত্যগুন দিয়ে রজগুনকে দমন করতে হবে।
চরণতলে শিব :
Maa kali র চরণতলে শিব শায়িত অবস্থায় থাকে। শিব হলো স্থির এবং কালী হলো গতিময়ী । আর গতিকে ঠিক রাখতে হলে স্থিরের উপর তার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়। শিব ব্রহ্মচৈতন্য আর দেবী ব্রহ্মশক্তি। তাদের দুজন ছাড়া সৃষ্টির উৎপত্তি সম্ভব নয় অর্থাৎ অসম্ভব। তাই মায়ের পদতলে শিব শায়িত অবস্থায় থাকে।
চতুর্ভুজা কালী :
মা হলেন চতুর্ভুজা। তার ডানদিকের নিচের হাতে থাকে আশীর্বাদ মুদ্রা এবং উপরের হাতে থাকে বরাভয় মুদ্রা। কারন মা যেমন তার সন্তানদের রক্ষা করেন তেমনি তিনি তার ভক্তদের মনোকামনাও পুর্ন করে থাকেন। আর মায়ের বামদিকের নিচের হাতে থাকে একটি কর্তিত মুন্ডু এবং উপরের হাতে রয়েছে খর্গ। অর্থাৎ তিনি মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ জীবকুলকে জ্ঞান দিতে পারেন তাদেরকে মুক্তির পথ দেখাতে পারেন। যার ফলে মায়ায় আচ্ছন্ন জীবকুল মায়ের দেখানো পথ অনুসরন করে মুক্তি পেতে পারে।
কোমরে কর্তিত হাতের মেখলা :
মা কোমরে কর্তিত হাতের মেখলা পরিধান করে থাকেন। এই হাত হলো কর্মের প্রতীক। মা নিজেই সমস্ত মানুষের কর্মফলদাত্রী। তিনি সকলকে কর্মফল দান করে থাকেন। মৃত্যুর পর সমস্ত আত্মা মায়ের দেহে অঙ্গীভূত হয়। এবং মায়ের জঠারাগ্নি থেকেই সেই সমস্ত আত্মা তাদের কর্মফল অনুযায়ী জন্মগ্রহন হয়।
Maa kali জিহ্বা বের করে রাখেন কেন :
মা হলেন আনন্দময়ী শক্তিরূপিনি দেবী। তিনি সনাতন ধর্মে পুজিত হয়ে থাকেন। অসুরদের অত্যাচারের হাত থেকে তিনি সমস্ত জগতকে রক্ষা করেন। অসুরদের বধ করার জন্য তিনি মহামায়া রূপে অবতীর্ন হন।
Maa kali তার জিহ্বা বের করে রাখেন। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন তিনি সারারাত দিয়ে লাল রঙের জিহ্বাকে কামড়ে ধরে রেখেছেন। লাল হল রজগুন আর সাদা হলো সত্যগুন। মা এখানে সমস্ত জগতকে বোঝাতে চেয়েছেন যে, সত্যগুন দ্বারা রজগুনকে দমন করতে হবে। কারন রজগুন হলো ঈশ্বর বিমুখ ভোগের গুন।
অনেকে আবার মনে করেন মা রক্ত পান করেছে বলে তার জিহ্বা লাল। কিন্তু রক্ত পান করলে জিহ্বা লালের সাথে দাঁতও লাল হয়ে যেত। কিন্তু তা তো হয়নি। মায়ের দাঁত কিন্তু সাদাই রয়েছে। আর মা তার ভক্তদের আর সন্তানদের রক্ত পান করবেনই বা কেন ? নিজেই বিচার করুন।
আবার অনেকে বলে থাকেন তিনি শিবের উপরে পা দিয়েছেন বলে তিনি তার জিহ্বা বের করে রেখেছেন। এক্ষেত্রে শিব বলেন তিনি যদি আমাকে শক্তি দেন তাহলেই আমি শিব। না হলে আমি শক্তিহীন শব। তাই আমি তার পদতলে রয়েছি। কারন এই সংসারে সবাই শক্তির অধীন। আশাকরি ব্যাপারটা আপনারা বুজতে পেরেছেন।
মায়ের পূজায় পাঁঠা বলি দেওয়া হয় কেন :
মহাদেব হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব। তিনি ভুত-প্রেত এবং পিশাচদের উপর কৃপা করে তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন। আবার অন্যদিকে maa kali হলেন যোক্ষীনী। তিনি ডাইনীদের আশ্রয় দিয়েছেন। এই শ্রেণীর প্রানীরা যাতে জগতে বেশি অত্যাচার এবং উৎপাত করতে না পারে সেইজন্যেই মহাদের এবং কালী তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এর ফলে রক্তমাংস হাড় ভক্ষনের প্রবনতা কমে। আর এই পিশাচগুন সম্পন্ন প্রানীদের জন্যেই আমাবস্যার গভীর রাতে মা কালীর সামনে পাঠা বলি দেওয়া হয়। শাস্ত্রে এই বিধান মাংসাহার নিয়ন্ত্রণের জন্যেই করা হয়েছে।
কিন্তু কালক্রমে নানাভাবে লোকেরা বলি প্রথার দোহাই দিয়ে অসংখ্য প্রানী হত্যা করে পাপের ভাগী হয়েছেন। প্রানী হত্যাকে বন্ধ করতে ভগবান শ্রীবিষ্ণু বুদ্ধ অবতারে আবির্ভূত হয়ে বলি প্রথাকে নিষিদ্ধ করেন। যাতে মানুষ বলি প্রথার দোহাই দিয়ে আর প্রাণী হত্যা না করে। এবং তারা পাপের হাত থেকে যেন মুক্ত থাকে। কিন্তু অসুরিক প্রবৃত্তির মানুষেরা জাগতিক লাভের আশায় প্রানী হত্যা করে কালী পূজা করে থাকে। আর অনবরত পাপ করতে থাকে। সেই পাপ মৃত্যুর আগে পর্যন্তও পিছু ছোটে না। তাই sanatan sikkha কে যদি আপনারা বিশ্বাস করে থাকেন তাহলে মায়ের পূজায় পাঠা বলি দিবেন না বা কোন ধরনের প্রানী হত্যা করবেন না।
কেন maa kali শ্মশানকে ভালবাসেন :
শ্মশানের নাম শুনলে আমরা সবাই ভয় পাই। ভয় পাওয়ারি কথা। যেখানে আধা পোড়া কাঠ, ভাঙ্গা কলসি, ভষ্ম, মৃতদেহের বস্ত্র, আরো কত কিছু পড়ে থাকে। আবার কত জীবজন্তুর ডাক, পাখিদের কোলাহল, শোনা যায় শ্মশানে। কখনো কখনো আবার মরা শিয়াল নিয়েও টানাটানি করা হয় এই শ্মশানে। আর তার সাথে দেওয়া হয় ভূত-প্রেতের গল্প। কিন্তু মা এই শ্মশানকেই ভালোবাসেন। তাই মায়ের আরেক নাম শ্মশান বাসিনি। আসুন তাহলে ব্যাপারটি জেনে নেওয়া যাক।
স্মশান হলো তপ ভূমি, মহাদেবের ভূমি। যা একটি পবিত্র স্থান। এই স্মশানে একদিন না একদিন সবাইকে আসতে হবে। কেউ রেহাই পাবে না। দুইদিন আগে হোক চাই দুইদিন পরে। জন্ম হলে তার শেষ ঠিকানা স্মশান। স্মশানে মৃতদেহ পড়ানো হবে। পঞ্চভুতের দেহ পঞ্চভূতেই বিলীন হয়ে যাবে। শরীরের কামনা বাসনা থাকে কিন্তু আত্মার থাকে না। কারন কামনা বাসনা আত্মাকে স্পর্শ করতে পারে না।
স্মশানে মৃতদেহকে পড়ানো হয়। এবং তার সাথে দেহের কামনা বাসনাও ভস্মিভূত হয়ে যায়। তাই মায়ের প্ৰিয় স্থান স্মশান। কারন কামনা বাসনা দূর না হলে মায়ের সাধনা পূর্ণ হয় না। স্মশানে সব অহংকার আগুনে পুরে হয় ছাই। সেখানে সকল অহংকারের নাশ হয়। গরীব, ধনী, সুন্দর, কুৎচিত সবাই। মৃত্যুর কাছে এদের কোনো ভেদাভেদ নেই। এরা নিজের নিয়মে চলে। তাই maa kali স্মশানকে ভালোবাসেন।
আবার স্মশান কিন্তু বৈরাজ্ঞ ভূমি। স্মশানে বসে থাকলে মনে বৈরাজ্ঞ জন্মে। আর বৈরাজ্ঞ ভক্তদের ভগবানের কাছে নিয়ে যায়। তাই মা স্মশানকে ভালোবাসেন। মন্দিরে শাস্ত্র পড়লে যে শিক্ষা পাওয়া যায়, কিছুক্ষণ শ্মশানে দাঁড়িয়ে থাকলে সেই জ্ঞান লাভ করা যায়।
মানুষের জন্ম হয় আবার মৃত্যু হয়। কামনা বাসনার প্রতীক দেহ শ্মশানে পুড়ে ছাই হয়। তাই সাধক সাধিকাগন শ্মশানকেই সাধনার স্থান হিসেবে বেছে নেন। যারা মনে করেন স্মশান অপবিত্র স্থান তারা এখনো মূর্খের ঘরে থাকেন। ক্ষমা করবেন। কিন্তু এটাই সত্য। স্মশান খুবই পবিত্র স্থান। তাই তো মা স্মশানকে ভালোবাসেন। আর যে স্থানে মা থাকেন সেই স্থান অপবিত্র হয় কি করে ?
মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসা :
মা অনন্ত শক্তিশালী। তিনি ভগবান বিষ্ণুর জগৎ পালিনী শক্তি। Maa kali সকল নারীর এক একটি মূর্তি। মায়ের মাতৃরূপ এই জগতের অন্তরে এবং বাহিরে প্রকাশিত হয়ে রয়েছে। প্রতিটি জীব তার প্রথম জ্ঞান মায়ের কাছেই পায়। মায়ের জগতই হলো শিশুদের আসল জগৎ। মায়ের কাছেই শিশুরা জীবন শক্তি পায় এবং সুরক্ষা পায়। তাই তো শিশুরা খুব পাওয়ার জন্য নির্ভয়ে ছুটে আসে মায়ের কাছে। হে মা তুমি সকলকে রক্ষা করো। জয় মা কালী।
উপসংহার :
প্রিয় সনাতনী ভক্তগন, আজকের পোস্টটি আপনাদের কেমন লেগেছে ? যেটা নাকি maa kali সম্পর্কে কিছু রহস্যজনক কথা নিয়ে ছিল। কমেন্টে সবাই জয় maa kali লিখবেন। সবাই ভালো থাকবেন। মা সকলকে মঙ্গল করুক এই কামনা করি। মায়ের শ্রী চরণে জানাই শতকোটি প্রনাম।
FAQ :
মা কালীর পূজায় পাঠা বলি দেওয়া হয় তাহলে মা কি মাংস খান ?
মা কালী হলেন মহাদেবের স্ত্রী। তিনি মহাদেবের উচ্ছিষ্ট গ্রহন করেন। আর মহাদেব হলেন পরম বৈষ্ণব। তিনি নিরামিষাশী এবং প্রসাদ ভোজনকরি। তাই মা ও নিরামিষাশী। তিনি মাংস খান না।